• Thursday, March 28, 2024

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নূর মোহাম্মদের কবর খুঁড়াই নেশা

  • Nov 25, 2018

৪০ বছর ধরে কবর খুঁড়ে চলেছেন নূর মোহাম্মদ
===========================

নিজস্ব প্রতিনিধি : ৪০ বছর ধরে কবর খুঁড়ে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নূর মোহাম্মদ। এটাই যেন তাঁর একমাত্র নেশা এখন। কবর হলো মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখার গর্ত। মৃত মানুষকে কবরে শায়িত করাকে বলা হয় দাফন করা। মুসলমানদের মৃতদেহ মাটিতে দাফন করা হয়। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.) এর ছেলে কাবিল তার ভাই হাবিলকে গুলি করে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে কবর দিয়েছিল। মেরুদন্ড এবং বক্ষপাজরের মাঝখানে বন্দুক ছিল কাবিলের। এটাই পৃথিবীর প্রথম কবর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেমনি এক মানুষ দিনের পর দিন হাজার হাজার মানুষের কবর খুঁড়ে চলেছেন কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়া। পৌর সভার ১৪ নং ওয়ার্ডের আজাইপুর মহল্লার বাসিন্দা মো. নূর মোহাম্মদ। বয়স প্রায় ৬৫-৭০ এর কাছাকাছি। তিনি বিগত ৪০ টি বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মৃত মানুষের দাফনের জন্য এ মহত কাজটি করে চলেছেন নি:স্বার্থ ভাবে। তিনি বলেন, আমি বিগত ৪০ বছরে প্রতিমাসে যদি ৮-১০ জন মানুষের জন্য কবর খুঁড়েছেন। সে হিসেবে নূর মোহাম্মদ প্রায় ৪ হাজার মানুষের কবর খুঁড়েছেন। তিনি আরো জানান, কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলেই সব কাজ ফেলে কোঁদাল হাতে নিয়ে ছুটে চলেন গোরস্থানের দিকে।

নূর মোহাম্মদ বলেন, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী অথবা অপরিচিত যেই হোক না কেন মৃত্যুর খবর শোনা মাত্রই ছুটে যায় কবরস্থানে।নিয়ম অনুযায়ি কবর খুঁড়ে দিয়ে আসি। শুধু কবর নয় তার জানাযার নামাজেও শরিক হই। তিনি আরো জানান, অনেক পরিবারের মানুষ কবর খোঁড়ার জন্য টাকা দিতে আসে কিস্তু আমি সেটা নিই না। কারণ আমি মনে করি এটা একটা মহত ও ভাল কাজ। আমাকেউ তো একদিন মরতে হবে। মাটির ঘর কবরে যেতে হবে সবাইকে। এ কাজটি করলে মন থেকে প্রশান্তি পায়। তা ছাড়া আমি মনে করি মহান আল্লাহ এ কাজের জন্য আমাকে ও আমার সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নূর মোহাম্মদ আরো জানান, সমাজে মানুষের উপকারের জন্য নানা রকম কাজ মানুষ করে থাকে। মৃত মানুষের জন্য স্বেচ্ছাই তাই এ পেশাকেই বেছে নিয়েছি।

বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদের মুখ ভর্তি লম্বা দাঁড়ি। ৫ ওয়াক্ত নামায পড়েন তিনি। আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অভ্যস্থ সে। কখনও মাটি কাটা, কখনও লেবার, কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করে যা রোজগার করেন তাতেই তিনি খুশি। বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদকে সকলে এলাকার কবর খুঁড়ার কারিগর হিসেবেই চেনে ও জানে।
শেষ বেলায় তিনি আরো বলেন, মৃত মানুষকে দাফনের জন্য নিজ দায়িত্ব ভেবে, মুসলমান জেনে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই এই কাজ করে যাব যতদিন বেঁচে আছি। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি সারাটা জীবন এত মানুষের কবর খুঁড়লাম, না জানি আমার কবরটি কে খুঁড়বে? সমাজে ব্যতিক্রম ও মহৎ কাজের জন্য তিনি সত্যি ইতিহাস হয়ে থাকবেন সকলের অন্তরে।