• Friday, April 26, 2024

রাজশাহীতে সবজির দাম কম, হতাশায় ভুগছে চাষিরা

  • Oct 15, 2018

হঠাৎ করে দাম কমায় সবজি চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে চাষি পর্যায়ে সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। বর্তমানে বেশী লাভের আশায় শীতের সবজি কমবেশী প্রতিটি ঋতুতেই উৎপাদন হচ্ছে। আর এসব সবজি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। তবে কয়েকদিনের তিতলির বৃষ্টিতে হতাশাজনকভাবে সবজির দাম কমেছে। এতে আশা ভঙ্গ হতে বসেছে চাষিদের।

রাজশাহী জেলায় বর্তমানে (খরিপ ও রবি মৌসুমে) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শীতের সবজি ফুলকপি, বাধাঁকপি, মূলা, লাউ, কুমড়া, পটল, বেগুন, বরবটি, করলা, পেপে, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। শুধু সবজির ওপর ভিত্তি করে সাপ্তাহিক হাটবার ছাড়াও রাস্তার ধারেই গড়ে উঠেছে প্রাত্যহিক বাজার। এসব হাটগুলো থেকে প্রতিদিন ট্রাক লোড হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়িরা।

রাজশাহীতে বর্তমানে চাষিরা মুলা, বেগুন, পটল, বরবটি, ঢেড়স, শাক-সবজি চাষ করছেন। এসব সবজি বিক্রি করে কেহ কেহ লাভবান হলেও অনেকে কোনো রকমে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না। উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাত করণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এলাকার চাষিরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমি বাজারে সবজির আমদানি বাড়লে পাইকারী-ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেয়। ফলে কৃষকেরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে চরমভাবে লোকসান হয় চাষিদের। সরকারিভাবে এলাকায় সবজি প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব হতো।

 

 

 

 

সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন সবজি ওঠার সময় দাম একটু বেশি পাওয়া গেলেও আমদানি বেশি হওয়ার সাথে সাথে দাম কমতে থাকে। গত হাটবারে প্রতিমণ (৪০ কেজি) যে সবজির দাম ৬শ’ ছিল আজ প্রতিমণ সে সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ছে।

রোববার মোহনপুর উপজেলার বিদিরপুর সবজির পাইকারি হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা দরে, পটল প্রতিমণ ২০০-৩৫০টাকা, বেগুন প্রতিমণ ২০০-৪০০টাকা, মূলা প্রতিমণ ৩০০-সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার পেঁপে বিক্রি হচ্ছে বড় বড় বস্তা ঠিকাই। প্রতিবস্তায় কমপক্ষে ১০০ কেজি পেঁপে ধরে। একবস্তা পেঁপে বিক্রি করে টাকা পাচ্ছে মাত্র ২৫০-৩০০ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেই প্রতিমণ পটল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৫০০-৬৫০টাকা, বেগুন প্রতিমণ ৬০০-৭৫০টাকা এবং মূলা প্রতিমণ ৫০০-৭৫০ টাকা।

পবার ইটাঘাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন আড়তদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারীরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যে দাম নির্ধারণ করেন সেই দামেই আমাদের সবজি বিক্রি করতে হবে। কৃষি উপকরণের দামের তুলনায় সবজির দাম কম। এই দামে সবজি বিক্রি করে কোনো রকমে আবাদের খরচ ওঠছে বলে তিনি জানান। জমি তৈরী, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক এর দাম বাদ দিয়ে আর কিছু থাকে না।

মোহনপুর উপজেলার ঘাষিগ্রামের শ্যামপুর গ্রামের সবজি চাষি আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, দিন-রাত হাড় ভাঙা পরিশ্রমে সবজি চাষ করে কোনো রকমে খরচের টাকা তুলতে পারছেন তারা। মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে সবজি বিক্রি করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তা খরচ বেশী হওয়ায় একদিকে চাষিরা সবজির দাম পান না এবং অন্যদিকে ভোক্তাদের অনেক বেশী টাকা দিয়ে কিনতে হয়।

নগরীর সাহেববাজারে সবজি কিনতে আসা সোহাগ খান বলেন, আমার মামা গ্রামে চাষাবাদ করেন। তিনি প্রতি কেজি পটল ৭ টাকা ও প্রতিকেজি মরিচ বর্তমানে বিক্রি করছে ৩২ টাকায়। অথচ আমাদের শহরে কিনতে হচ্ছে অনেক বেশী দামে। মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন সাধারণ ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা বড় একটি অংশ লাভ নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উৎপাদনকারী, চাষি ও ভোক্তারা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তদারকি আশু দৃষ্টি দেবার জন্য দাবি জানিয়েছেন তিনি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, এবার আগাম শীতের সবজি চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর রবি মৌসুমে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর।