• Saturday, October 12, 2024

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গায় পদ্মার নদীর তীব্র ভাঙন: প্রতিরোধ না হলে ৩’শ কোটি টাকার বামতীর সংরক্ষন প্রকল্প ভেস্তে যাবে

  • Aug 05, 2018

Share With

মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৬০ বছর বয়সী সাজ্জাদ হোসেন, পদ্মা পাড়েই তার কেটেছে জীবনের সবটা সময়। সাজ্জাদ হোসেনের বয়স যত বেড়েছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়েছে তার ঠিকানা পরিবর্তন। পদ্মার ভাঙনের কারনে সাজ্জাদ হোসেনকে অন্তত ১০ বার তার বাড়িঘর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। আর এ ভাঙা গড়ার খেলায় আজ বড্ড ক্লান্ত জীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসা সাজ্জাদ হোসেন। কথা বলতে বলতে বলতে,তিনি বলছিলেন এটায় তার জীবনের শেষ বক্তব্য, ‘বড় কষ্টে আছি, ভিটে মাটি সব পদ্মায় চলে গেছে, অন্যের জমিতে বাড়ি করে আছি, সেটাও এখন ভাঙনের মুখে,যা করার একটু দ্রুত করেন যাতে পদ্মার ভাঙন থেকে আমরা গ্রামবাসী একটু রক্ষা পায়।  শুধু সাজ্জাদ হোসেনই নয় পদ্মাপাড়ের মানুষগুলো জীবনের গল্পটা একই রকম, পদ্মা তাদের অনেক কিছু দিয়েছে, সেই পদ্মায় কেড়ে নিয়েছে সব সহায় সম্বল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফারাক্কা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর বাম তীরে ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভাঙন শুরু হয়। এরপর অনেকবারই ভাঙন প্রতিরোধে নানা প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তবুও থামানো যায়নি পদ্মাকে, বিলিন হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম ।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাল বাগডাঙ্গা মৌজার রোড পাড়া, কাঁইড়া পাড়া, চাকপাড়া পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে, আর প্রতিদিনই ভাঙছে কোন না কোন এলাকা। ভাঙনের হুমকিতে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাটবাজার, বিজিবি ক্যাম্প, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। যে যার মত পাচ্ছেন নিজের ঘরবাড়ি অন্যস্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছেন।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাসুদ রানা জানান, তাদের প্রায় ১০ বিঘার পারিবারিক আম বাগান গত বছরের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বসতবাড়িও ছুঁইছুঁই করছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান জানান, গত ২ বছরে ইউনিয়নের মাল বাগডাঙ্গা মৌজার রোড পাড়া, কাঁইড়া পাড়া, চাকপাড়া পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামের মানুষগুলো বর্তমানে বারঘরিয়া ইউনিয়নের সøুইস গেট এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকমে মাথা গুঁজেছেন। বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে ৪ ও ৯ নং ওয়ার্ড।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম জানান, ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী ৪ শ মটিার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ভূখন্ড রক্ষাতে পদ্মার বামতীর অর্থাৎ গোয়ালঢুবি থেকে ২৬ শ মিটার এলাকার নদীতীর সংক্ষন কাজ বাস্তবায়নের লক্ষে ২ শ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়েছে।

এ ব্যপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেন, আপাততঃ ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্তানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪’শ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও, ভাঙ্গনরাধে ফাটা পাড়া থেকে চরবাগডাঙ্গা বিওপি পর্যন্ত প্রায় ২৬’শ মিটার বাঁধ দেয়া প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তুত করার জন্য বলেছি, আশা করছি দ্রুত সময়ে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে বাঁধ নির্মান কাজও শুরু হবে।