• Thursday, November 21, 2024

অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনই আমার প্রত্যাশা : প্রধানমন্ত্রী

  • Nov 03, 2018

Share With

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলোচনায় বসার পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় সংলাপে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আলোচনা চলছে, তখন আবার দেখলাম আন্দোলনের কর্মসূচিও তারা দেয়। একদিকে আলোচনা করবে আবার আরেকদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া, এটা কী ধরনের সংলাপ? সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য না। জানি না, দেশবাসী জাতি এটা কীভাবে নেবে?”

শনিবার জেল হত্যা দিবসে ঢাকার ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে চলমান সংলাপ নিয়ে একথা বলেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির সংলাপের আহ্বান দীর্ঘদিন নাকচ করে আসার পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রত্যাশিতভাবে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তাদের নতুন জোটকে আলোচনায় ডাকেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হোক, আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন সামনে রেখে যখন ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিল আমাদের সাথে দেখা করতে, তখন আমি সাথে সাথে স্বাগত জানালাম। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও যারাই দেখা করতে চাচ্ছে, আমরা করছি। ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট- দুটো গ্রুপের সাথে আমাদের মিটিং হয়ে গেছে। এরপর আরও সকলের সাথে আমরা করব।

“যারা আলাপ করতে চেয়েছে, সংলাপ করতে চেয়েছে, আমরা করেছি। একটা সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারা যে সমস্ত দাবি-দাওয়া দিয়েছে, যে সব দাবি-দাওয়া আমাদের পক্ষে করা সম্ভব, আমরা বলেছি সেটা করব।”

গত বৃহস্পতিবার গণভবনে সংলাপে প্রত্যাশিত সমাধান না পাওয়ার কথা জানিয়ে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা।

বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুললেও সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি পূরণ করা হবে না বলে তাদের জানিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বলেছি, রাজবন্দিদের তালিকা দেন। তাদের প্রতি যদি কোনো খুনের মামলা না থাকে, কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স তারা করে না থাকে, তাহলে অবশ্যই…

“আর আমরা কাউকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করি নাই। তাই যদি করতাম, তাহলে খালেদা জিয়া যখন ২০১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারল, তখনই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। সেটাও তো আমরা করিনি। কাজেই আমরা তো রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করিনি।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “১০টা বছর ধরে মামলাটা চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলেও তো ১০ বছর লাগার কথা না।”

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির বিষয়ে সরকারের কিছু করার সুযোগ না থাকার কথাও বলেন তিনি।

“আমাদের তো কিছু করার নাই। আর বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীন বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে, সে রায়ে খালেদা জিয়া সাজা ভোগ করছে এবং তারেক জিয়া ভোগ করছে।”

খালেদা জিয়া ও তারেকের দুর্নীতি ‘আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারেক জিয়ার জন্য তো আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষি দিয়ে গেছে, আর খালেদা জিয়ার জন্য কয়েকটি কেইসে তারা সাক্ষি দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত যে এরা দুর্নীতিতে জড়িত।

“আমাদের করার কী আছে? তারপরও আমরা বলেছি, আপনারা তালিকা দেন। আমরা দেখব কী করা যেতে পারে। আমরা খুব চাই সকলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এদেশের মানুষের যেন আর ওই জ্বালাও-পোড়াও এর সম্মুখীন হতে না হয়।”

দশম সংসদ নির্বাচনে আগে খালেদা জিয়াকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ছেলের মৃত্যুতে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বন্ধ দরজা থেকে ফিরে আসার বিরূপ অভিজ্ঞতার পরও বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার ক্ষেত্রে জনগণের চিন্তাই মাথায় রেখেছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

“শুধুমাত্র দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে এবং মানুষ শান্তিতে ভোট দিক, তাদের পছন্দের সরকার বেছে নিক- সেজন্যই আমরা এ সংলাপে বসেছি, আলোচনা করেছি।

“অধিকাংশ সময় তারাই কিন্তু বলেছে, আমি কিন্তু একটা কথাও বলিনি। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এই জোটের যারা তারা কথা বলেছে। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে কথা। একেবারে সর্বশেষ সমাপ্তির জন্য যতটুকু বলা, সেটুকু আমি বলেছি। আর সেখানেও আমি বলেছি, কোনটা আমরা করতে পারি, কোনটা কীভাবে করা যায়, সেটা বলে সমাপ্তি টেনেছি। কিছু দাবি আমরা মেনেও নিয়েছি।”

বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদের পরিচালনায় জেল হত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের এবং নিহত চার নেতার পরিবারের সদস্যরা।