আকাশবীণা : বাংলাদেশ বিমান উন্নয়নের নতুন পালক
- Sep 07, 2018

আলোকিত ডেস্ক : দেশের একমাত্র সরকারি এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আকাশে শান্তির নীড় নামে ১৯৭২ সালে এর যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে সরকারি খাতে একক ভাবে আধিপত্য করে আসছে বাংলাদেশ বিমান। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের শুরুটা এত বেশি মসৃণ ছিল না। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের এয়ারলাইন্সের অধীনে খুব বেশি বিমান ছিল না।
বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার জাতীয় বিমান চলাচল সংস্থার যাত্রা শুরু হয়েছে কোনো উড়োজাহাজ ছাড়াই ৷ কিন্তু তখন এর জনবল ছিল প্রায় ২,৫০০ ৷ যার মধ্যে ১৭ জন ছিলেন বৈমানিক ৷ সেই করুণ অবস্থা থেকে বাংলাদেশ বিমান আজ পৌঁছেছে একটি অবস্থানে। বর্তমান সরকার দেশের সরকারি এভিয়েশন খাতকে আরও উন্নত করার জন্য নিয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে যোগ হয়েছে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭- ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। ১৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমানটি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঢাকায় আসার পর থেকেই এই অত্যাধুনিক বিমানটিকে নিয়ে উৎসাহ সৃষ্টি হয়। অবশেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আকাশবীণার উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট। এছাড়াও ছিলেন বর্তমান সরকারের আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতাকর্মী। উদ্বোধনের পর বার্নিকাটের সাথে সেলফি তুলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ড্রিমলাইনার সহ বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৫টি। ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে যে কয়টি নতুন বিমান সংযোজন করা হয়েছে তার সব কয়টি নামকরণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে। বিমান গুলোর নাম যথাক্রমে পালকি, অরুণালোক, আকাশ প্রদীপ, রাঙাপ্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্ক্ষী।
আকাশবাণীতে যাত্রীগণ অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা পাবে। এর আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি এবং ২৪৭টি ইকোনমিক ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। যাত্রা পথে সরাসরি নয়টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একই সঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে একশটির বেশি ক্লাসিক থেকে ব্লকব্লাস্টার সিনেমা। যাত্রীগণ যাত্রাপথে যাতে বিরক্ত ও ক্লান্তি বোধ না করে সেজন্য করা হয়েছে ব্যবস্থা। এমনকি যাত্রীরা ওয়াইফাই এর সুবিধাও পাবে।
বিমান উড্ডয়ন কালে ফোন কল ও করতে পারবেন যাত্রীরা। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ জ্বালানি লাগবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে বিমানে প্রতিটি কর্মী যাতে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে সেদিকে প্রত্যেকের সচেষ্ট থাকতে হবে। দেশের বাহিরের মানুষের মুখে যাতে দেশের বদনাম না হয়। দেশি বিদেশী যাত্রীদের মালামাল যাতে দ্রুত খালাস হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যাত্রীগণ যেন দ্রুত ও নিরাপদে তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারে এজন্য সব রকম সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
একসময় বিমানে বসলে পানি পড়তো। সেই পানি টয়লেট টিস্যু বা তোয়ালে দিয়ে বন্ধ করতে হতো। বর্তমান সরকার বিমানের ছোট থেকে বড় সকল ধরণের সমস্যার সমাধান করেন। পুরনো বিমানের পাশাপাশি সংযোজন করা হয় অনেক অত্যাধুনিক বিমান। বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ বলে কিছুই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে সেখানে বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়। দেশের বিমান খাত আরও বেশি ত্বরান্বিত করার জন্য নভেম্বরে আরেকটি ড্রিমলাইনার সংযোজন করা হবে বাংলাদেশ বিমান বহরে।
যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও দেশের সৈয়দপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের বিমানবন্দর আরও উন্নত করা হবে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আরো শক্তিশালী হবে। কক্সবাজারের বিমানবন্দরের উন্নয়নের ফলে দেশের বাহিরের পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবে এবং দেশের পর্যটক খাত আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে।
দেশের সব উন্নত দেশের এভিয়েশন খাত অনেক বেশি উন্নত। রূপকল্প – ২১ ও রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের জন্য দেশের প্রতিটি খাতের সাথে এভিয়েশন খাতও এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট সকলে।