লুণ্ঠিত ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু
- Sep 04, 2024
সারাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে পরে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ আনসারের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। সারাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে পরে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট হয়। সেসব অস্ত্রের ২ হাজার ৬৬টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটে। শেষ তিন দিন (শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগে-পরে) থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়।
এছাড়া গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র জমা না করলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়াও কোনো ব্যক্তির কাছে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। অস্ত্র জমা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন থানায় বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের হালনাগাদ হওয়া তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে। তাদের বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত যতগুলো উদ্ধার হয়েছে:
৭.৬২×৩৯ মি.মি. রাইফেল-(চায়না) লুট হয় ১ হাজার ১৪৭টি যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৮০৯টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ৩৩৮টি। ৭.৬২×৩৯ মি.মি. রাইফেল-টি ০৮ (বিডি) লুট হয় ১০টি যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৯টি আর উদ্ধার হয়নি ১টি। ৭.৬২×৩৯ মি.মি. এসএমজি-টি ৫৬ (চায়না) লুট হয় ২৫১টি যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৮৮৫টি। উদ্ধার হয়নি ৬৬টি।
৭.৬২×৩৯ মি.মি. এলএমজি-টি ৫৬ (চায়না) লুট হয় ৩২টি যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ২১ টি। উদ্ধার হয়নি ২১ টি। ৭.৬২×২৫ মি.মি. পিস্তল-টি ৫৪ (চায়না) ও ৯×১৯ মি.মি. পিস্তল লুট হয় ১ হাজার ৫৫৬ টি যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৭০৭টি। উদ্ধার হয়নি ৮৪৯টি। ৯×১৯ মি.মি. এসএমজি/এসএমটি লুট হয় ৩৩টি, উদ্ধার করা হয়েছে ৩২টি। উদ্ধার হয়নি ১টি।
১২ বোর শটগান লুট হয় ২ হাজার ১৯০টি, উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮টি। উদ্ধার হয়নি ৬২২টি। ৩৮ মি.মি. গ্যাস গান (সিঙ্গেল শট) লুট হয় ৫৯৩টি। উদ্ধার করা হয়েছে ৪২৫টি। উদ্ধার হয়নি ১৬৮টি। ৩৮ মি.মি. টিয়ার গ্যাস লাঞ্চার (সিক্স শট) লুট হয় ১৪টি, উদ্ধার হয়েছে ১৪টি। হয়নি ৮টি এবং ২৬ মি.মি. সিগন্যাল পিস্তল লুট হয় ৩টি, যার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি আর এখনো উদ্ধার হয়নি ২টি।
লুট হওয়া এসব অস্ত্র এবং স্থগিত করা লাইসেন্সকৃত অস্ত্র উদ্ধারে রাত ১২টা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করবে। মঙ্গলবার সকালে এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্য একটি সমন্বয় সভা ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র: ঢাকা টাইমস