• Saturday, December 21, 2024

একুশে পদক পাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান ডা.মেসবাহুল হক বাচ্চু

  • Feb 05, 2020

Share With

মাহবুুবুল ইসলাম ইমন : 

মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ সর্বচ্চো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ (মরণোত্তর) ভূষিত হতে যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান ‘প্রয়াত ডা.আ.আ.ম.মেসবাহুল হক বাচ্চু’।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক ২০২০ পাচ্ছেন দেশের ২০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান। বুধবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রাক্তণ গণ পরিষদ ও জাতীয় সংসদ সদস্য, বর্ষিয়াণ জননেতা, ভাষাসৈনিক ‘ডা. আ.আ.ম.মেসবাহুল হক বাচ্চু’ ১৯৩০ সালের ৩ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয়দফা, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাচ্চু ডাক্তারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও যোগ্য নেতৃত্ব জেলার রাজনৈতিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। আ.আ.ম.মেসবাহুল হক (বাচ্চু) জাতীয়-স্থানীয়ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসী অহংকার ও গর্ব।

বর্ণাঢ্য, সফল রাজনৈতিক জীবনে ডা.মেসবাহুল হক বাচ্চু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৭০), স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদ সদস্য (১৯৭১-৭২) এবং ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে বাচ্চু ডাক্তারকে বঙ্গবন্ধু শেখ মৃজিবুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জের গভর্নর নিযুক্ত করেন।

তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডা.মেসবাহুল হক বাচ্চু এবং শিবগঞ্জের ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টু। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা-আওয়ামীলীগের ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদক/সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনের জন্য কারাবরণ করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতি তাঁর গৌরবময় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দলীয় সভানেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে আজীবন সম্মাননা-পদক প্রদান করেন। দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে পাওয়া এরকম সম্মাননা-পদক চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাচ্চু ডাক্তার ব্যতিত অন্য কোন ব্যক্তির নেই বলেই, তিনি আজ কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামীলীগ আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাচ্চু ডাক্তার এক সূত্রে গাঁথা বলেই মনে হয় !

মেধাবী ছাত্র মেসবাহুল হক বাচ্চু রাজশাহী মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারীর দিবাগত রাতেই রাজশাহী সরকারি কলেজের মুসলিম হোস্টেলের গেটে ইট ও কাদা দিয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। অনেকেই এটিকে দেশের প্রথম শহীদ মিনার বলে দাবি করে থাকেন। এ শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ্যাড.গোলাম আরিফ টিপু, প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন, ডা.মেসবাহুল হক বাচ্চু, প্রকৌশলী মজিবুর রহমান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারী পূর্বাহ্ণেই অবশ্য পুলিশ এ শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মেসবাহুল হক বাচ্চু ছিলেন ইতোপূর্বে রাজশাহী সরকারি কলেজের ছাত্র। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান রাজশাহী সফরে এলে রাজশাহী কলেজের ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁকে স্মারকলিপি প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রীকে ডেপুটেশন প্রদানের কথিত অপরাধে ১৬ জন ছাত্রকে এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বহিস্কার করেন। তাঁদের মধ্যে মেসবাহুল হক বাচ্চুও কলেজ থেকে বহিস্কৃত হন। ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কথিত অপরাধে ১৯৫৪ সালে রাজশাহীতে ৪০ জন ছাত্রনেতা কারাবরণ করেন, তাঁদের মধ্যে মেসবাহুল হক বাচ্চু একজন।

অসহযোগ আন্দোলন হতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত মেসবাহুল হক বাচ্চু চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫-সদস্য বিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ডা.আ.আ.ম. মেসবাহুল হক।

মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালে মালদহে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত জোনাল অফিসের সহকারী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন গৌড় বাগান প্রশিণ কেন্দ্রের ইনচার্জ। স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের নীতি ও রণকৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশের পক্ষে তিনিই মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।

সমাজসেবী মেসবাহুল হক বাচ্চু নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নবাবগঞ্জ শিশু শিক্ষা নিকেতন, জেলা স্কুল, বালিয়াডাঙ্গা সিনিয়র মাদ্রাসা, নবাবগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক বাচ্চু ডাক্তারের স্ত্রীর নাম মাসুদা হক। তাঁর সুযোগ্য সন্তান ফেরদৌসী ইসলাম জেসি বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি।  ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারী তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

#  মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষাসৈনিক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান ‘আ.আ.ম.মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তারের’ একুশে পদকপ্রাপ্তিতে (মরণোত্তর) ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের’ পক্ষ থেকে রইল প্রাণঢালা অভিনন্দন ও গভীর শ্রদ্ধা…