• Monday, December 30, 2024

কলড্রপের ভোগান্তি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী

  • Oct 30, 2018

Share With

দেশে সেলফোন বা মোবাইলের বিস্তর ও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি। কিছু বেশিও হতে পারে। কেননা বেআইনী ও অনিবন্ধিত সিম রয়েছে অনেকের হাতে। সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এহেন ঈর্ষণীয় সাফল্য ও সুফল সত্ত্বেও বিড়ম্বনাও কিন্তু কিছু কম নেই। ভুয়া মেসেজ ও ছবি পাঠিয়ে প্রতিপক্ষকে বিব্রত ও ব্ল্যাকমেল করার নজির প্রায়ই উঠে আসে গণমাধ্যমে। মোবাইলের অপব্যবহারে চুরি-ছিনতাই-রাহাজানি-অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদিও কিছু কম হয় না।

এসবই মোবাইলের নেতিবাচক দিক হলেও বলতেই হয় যে, মোবাইল বা সেলফোন ব্যবহারের ইতিবাচক দিকই অনেক বেশি। তবে আজকের প্রসঙ্গ মোবাইলের আরও একটি বড় বিড়ম্বনা বা ভোগান্তি ‘কলড্রপ’ নিয়ে। এমনিতেই মোবাইল গ্রাহকরা প্রতিদিন সেলফোনে যখন তখন ‘কলড্রপ’ নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিষয়টি তোলায় এ নিয়ে চলছে আলোচনা। জাতীয় সংসদের শেষ চলমান অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি কলে ৪ থেকে ৫ বার কলড্রপ হয়। এটা কোন অবস্থাতেই বাস্তবসম্মত হতে পারে না। বিশেষ একটি কোম্পানির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিছক বাণিজ্যের জন্য কলড্রপ করে থাকে।

এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতঃপর নড়ে-চড়ে বসে বিটিআরসি বা টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ। তারা দেশীয় চারটি সেলফোন অপারেটর কোম্পানিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, কেন ঘন ঘন কলড্রপ হচ্ছে? কোম্পানিগুলো কলড্রপ বন্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কিনা? গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হলেও কলড্রপের জন্য আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন কিনা! … ইত্যাদি ইত্যাদি। এর উত্তর পেতে বিটিআরসি সময়ও বেঁধে দিয়েছে, মাত্র পাঁচ দিন।

এই সময়সীমার মধ্যে সেলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো আদৌ উত্তর দেবে কিনা তা জানা যাবে যথাসময়ে। তবে নিকট অতীতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অপারেটর কোম্পানিগুলো বিটিআরসিকে প্রায়ই পাত্তা দেয় না। কলড্রপের ভোগান্তি ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে বিটিআরসি-এর আগেও চিঠি দিয়েছিল ৪টি কোম্পানিকে। গত বছরের শেষে মাত্র একটি কোম্পানি বছরে ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের হিসাব দিয়েছিল। তবে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বাকি তিনটি অপারেটর কোম্পানি আদৌ কোন হিসাব দেয়নি। অথচ বিটিআরসি বলছে, প্রতিদিন মোবাইল অপারেটরদের গড়ে ২২২ কোটি মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। সে অবস্থায় সীমাহীন কলড্রপে গ্রাহকের অন্তহীন ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে এর জন্য গ্রাহকরা আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ পান না। বিটিআরসি গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা টকটাইম ফেরত দেয়ার লিখিত নির্দেশ দিলেও তাও বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয় না কোন কোম্পানিই। মোট কথা, প্রতিদিন কলড্রপ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে। এর যথাসত্বর অবসান হওয়া দরকার।

মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো যখন তখন কারণে অকারণে ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠিয়েও অযথা বিরক্ত ও হয়রানি করে থাকে গ্রাহকদের। এ নিয়ে বিরক্ত সংসদ সদস্যরাও। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও আদৌ কোন ফল মেলেনি। সম্প্রতি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বিটিআরসিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। অতঃপর সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় যে, অতি শীঘ্রই কলড্রপ ও এসএমএস পাঠানোজনিত ভোগান্তির অবসান হবে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ব্যবসা করবে স্বচ্ছতা, নিয়মনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের ভিত্তিতে।