• Saturday, December 21, 2024

খ্যাতিমান সাংবাদিক ও শিশু সাহিত্যিক ‘সৈয়দ নাজাত হোসেনের’ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

  • Dec 07, 2018

Share With

মাহবুবুল ইসলাম ইমন : 

খ্যাতিমান সাংবাদিক ও বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ‘সৈয়দ নাজাত হোসেনের’ আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। পৈত্রিক নিবাস জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে হলেও কর্ম-বৈবাহিক সূত্রে তিনি ১৯৮৫ সালের পর থেকে মৃত্যুঅবধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালুবাগান মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে না জন্মালেও যে সকল ব্যক্তির চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান-অর্জন ও কৃতিত্ব রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত সৈয়দ নাজাত হোসেন।

তাঁর পিতা প্রয়াত সৈয়দ হামিদুর রশিদ পুলিশে চাকরির পাশাপাশি রাজশাহী বেতারের পল্লীগীতির সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে দীর্ঘদিন সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। দেশবরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী ‘দিলরুবা খান’ হলেন তাঁর বড় বোন।

১৯৮৮ সালে শেষের দিকে সাংবাদিক নাজাত হোসেনের সম্পাদনায় ‘সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তা’ (জেলা প্রশাসক কর্তৃক ডিক্লারেশনপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রথম সংবাদপত্র) প্রকাশিত হয়। শুধু সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তা নয়, দৈনিক নবাব (চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম দৈনিক) নামে আরও একটি পত্রিকা সেই সময় প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে জাতীয় পত্রিকা- দৈনিক বার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীতে দৈনিক খবর, দৈনিক আজাদ, দৈনিক কিষাণ, দৈনিক শক্তিসহ এপিপির মতো বিখ্যাত গণমাধ্যমে সাব-এডিটর, স্টাফ রিপোর্টার, সহকারী সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন।

সাংবাদিক নাজাত হোসেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক নবাব ও সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তার মাধ্যমে হাতে খড়ি নিয়েছেন আনোয়ার হক, আনু মোস্তাফা, জোনাব আলী, আমিনুল ইসলাম, শহিদুল হুদা অলক, ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট, সাত্তার হোসেন, জিয়াউল হক সবুজ, তাসকিনা ইয়াসমিনসহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের আরও অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ব্যক্তিবর্গ। মূলত সৈয়দ নাজাত হোসেনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আধুনিক সাংবাদিকতা জগতের গোড়াপত্তন করেন। নাজাত হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ না করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা জগতের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন অনন্তকাল…।

সৈয়দ নাজাত হোসেন ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরাম আয়োজিত দেশের সেরা ৭ সাংবাদিকের একজন হিসেবে পুরস্কৃত হন। সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা.দিপু মনি তাঁকে এ সম্মাননা পদকটি প্রদান করেন। ৯০ এর দশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং পরবর্তীতে জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন ‘জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার’ মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ চ্যানেল আই, রেডিও আমার, মাছরাঙা টেলিভিশনের ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের সাংবাদিতার জীবনে বস্তুনিষ্ঠ, দু:সাহসিক সংবাদ-প্রতিবেদনসহ তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু সাংবাদিক নয়, গীতিকার, নাট্যকার ও ছড়াকার হিসেবেও সৈয়দ নাজাত হোসেনের খ্যাতি রয়েছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত নাট্যকার ও গীতিকার তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তাঁর রচিত অসংখ্য গান-নাটক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে সতেরটি নাটক প্রচারিত হয়েছে। ৮০ এর দশকে ঢাকার বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চ ও ব্রিটিশ কাউন্সিল মঞ্চে ‘আজরাঈলের পোষ্ট মর্টেম ও শেষ যুদ্ধের শুরু’ নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে অভিনেতা হিসেবে দেশব্যাপি সুনাম অর্জন করেন তিনি। স্থানীয়সহ দেশের প্রায় সকল পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ফিচার প্রভৃতি প্রকাশিত হয়েছে। ‘হাত ঝুমঝুম পা ঝুমঝুম’ নামের জনপ্রিয় ছড়াগ্রন্থটি নাজাত হোসেন প্রকাশিত প্রথম ছড়াগ্রন্থ । সর্বশেষ বাংলা একডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘এম.নুরুল কাদের সাহিত্য পুরষ্কার ২০১৪’ সম্মাননা-পদক অর্জন করেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ‘সৈয়দ নাজাত হোসেন’।

ব্যক্তিগত জীবনে চার ছেলের জনক নাজাত হোসেন ১৯৮৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালুবাগান এলাকার প্রয়াত শরিফুজ্জামানের কন্যা শাহিনা নাজাত মেরিকে বিয়ে করেন। মূলত বিয়ের পর থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালুবাগান মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। সৈয়দ নাজাত হোসেন ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর মৃতুবরণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফকিরপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাঁর কবর রয়েছে।

খ্যাতিমান সাংবাদিক ও শিশু সাহিত্যিক সৈয়দ নাজাত হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের’ পক্ষ থেকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা…