জনগণ আবার ভোট দিলে দেশকে আরও উন্নয়নের পথে নিয়ে যাব
- Oct 31, 2018
- শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ও হাসপাতাল ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সময় প্রায় শেষ। যে কোন মুহূর্তে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জনগণ ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করলে ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী দেশকে আরও উন্নয়নের পথে নিয়ে যাব। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় তাহলে তাদের সেবা করতে পারব। আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছিলাম বলেই আজকে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন বিদেশে যেখানেই যায়, একটা মর্যাদা পায়, একটা সম্মান পায়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাঙালীকে কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না ও তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সব সরকারী হাসপাতালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি আগত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে আরও বলেন, জনগণকে সেবা দেয়াটা আপনাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ এগুলো নির্মাণে সরকারকে অনেক কষ্ট করে বাজেট বরাদ্দ করতে হয়েছে। আর স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা আশা করব আপনারা চিকিৎসা সেবাটাকে আপনাদের কেবল পেশা হিসেবে নয়, মহান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের উদ্বোধন, এস্টাবলিস্টমেন্ট অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এ্যান্ড রেফারেল সেন্টার এ্যাটের উদ্বোধনসহ আরও আটটি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম শিশির এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশকে একসময় সবাই অবহেলা করত, এখন আর বাংলাদেশ সেই অবহেলিত না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশের সম্মান হারিয়ে গিয়েছিল। মানুষ বাংলাদেশ শুনলেই বলত, তোমরা তো খুনী, এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। বাংলাদেশকে আবার আমরা সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। যখন আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে, দেশ এগিয়ে গেছে।
দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি; ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা ব্যাপকভাবে উদযাপন করব। সেই লক্ষ্য নিয়েই ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে পুনরায় দেশ সেবার সুযোগ পেলে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। আমরা আগামী এক শ’ বছরের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছি। এই মুহূর্তে যে শিশুটি জন্ম নেবে তারও ভবিষ্যত বা আগামীতে যে শিশু জন্মাবে তাদেরও ভবিষ্যত এবং আমাদের তরুণদের ভবিষ্যত, সেই ভবিষ্যতকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা হবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশী অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান তাকে প্রশ্ন করে জানতে চান- কীভাবে বাংলাদেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, ম্যাজিকটা কী? আমার উত্তর একটাই- ম্যাজিক কিছুই না, সবটাই হচ্ছে আন্তরিকতা এবং কর্মনিষ্ঠা। মানুষের জন্য কিছু করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দিনরাত কাজ করি শুধু জনগণের জন্য। বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি।
১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন পিজি হাসপাতালে প্রথম ব্লাডব্যাংক স্থাপনের অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের উদ্দেশে জাতির পিতার দেয়া বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেনÑ ‘আপনারা ডাক্তার। আপনাদের মন হতে হবে অনেক উদার। আপনাদের মন হবে সেবার। আপনাদের কাছে ছোট বড় থাকবে না। আপনাদের কাছে থাকবে রোগ। কারও রোগ বেশি, কারও রোগ কম, তাহলেই তো সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন হবে এবং মানুষের মনে আপনারা জায়গা পাবেন।’
এ বিষয়ে চিকিৎসক সমাজের প্রতি অনুরোধ রেখে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সেবা করা, এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই আপনাদের এই পেশা। কাজেই এই পেশাকে আপনারা একটা মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে মানুষের সেবা করবেন। আর যেহেতু আমরা এত ইনস্টিটিউট হাসপাতাল করে দিচ্ছি, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি, নার্স নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি এতে কত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। মানুষের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। যা আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে।
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যখন যে কাজে হাত দিয়েছি, সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। তার সরকারের সময়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে আরও তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনে যদি দেশের জনগণ আমাদের ভোট দেয়, পুনরায় সরকার গঠন করতে পারি তাহলে ইনশাল্লাহ বাকি পাঁচ বিভাগেও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দেব।
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রবাসী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কতদিন বিদেশে থাকবেন। এখন তো দেশে এসে দেশের মানুষের সেবা করাটাই ভাল বলে মনে করি। আমাদের দেশ আরও উন্নত হোক। আমরা দেশের মানুষের উন্নতি চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।
সরকারের টানা দুই মেয়াদে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচীর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাছাড়া এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। যার মাধ্যমে এই যোগাযোগটা আরও দ্রুত হবে।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম শিশিরকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিরাজুল ইসলাম শিশির এখানে আছেন। তিনি থাকেন আমেরিকায়। মাঝে মাঝে ওখান থেকে কিন্তু অনলাইনে আমাদের এখানে লেকচার দিতে পারবেন। ট্রেনিং দিতে পারবেন, কথা বলতে পারবেন। আর যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন তো করবেনই। ওখানে কিন্তু আমাদের অনেক বাঙালী চিকিৎসক আছে। শুধু উনি একা না, আরও যারা আছেন তাদের নিয়েই তারা এই বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বিষয়ে আমাদের সাহায্য করবেন।
বাংলাদেশে যে রোগগুলোর এখন সব থেকে বেশি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর উপর চিকিৎসা গবেষণা করার জন্য চিকিৎসকদের জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ যাতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইন রোগের উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। ১০ তলা মূল হাসপাতাল ভবনসহ আরও চারটি পাঁচতলা ভবন নিয়ে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে।