• Tuesday, September 17, 2024

জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহিদ মিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শ্রদ্ধা

  • Aug 10, 2024

Share With

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরদিন শুক্রবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ বীর শহিদ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা এবং অপর ১৩ উপদেষ্টা। প্রথমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবত অর্পণ করেন এবং পরে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি শ্রদ্ধা জানান। এর আগে সকালে হেলিকপ্টারে সাভারে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানরা। এ সময় অন্যদের মধ্যে পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকশ দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করে। পরে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সেখানে রাখা পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হেলিকপ্টারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যান উপদেষ্টারা। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, হাসান আরিফ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রমুখ।

শুক্রবার শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশের মানুষেরই দায়িত্ব দেশটাকে বিনির্মাণ করা। এটা আমাদের একার কাজ নয়, এতে সারা দেশের মানুষকে যুক্ত হতে হবে। দেশ গড়ার জন্য তরুণসমাজ আমাদের জন্য যে সুযোগ এনে দিয়েছে, সেগুলোকে সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।

অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারকে সচল করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক খাত পুনরুজ্জীবিত করা দরকার, মানুষের জীবিকায়ও ছেদ পড়েছে। তাই অর্থনীতি, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং-সব খাতে বিরাজমান নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন জানান, সব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক কার্যক্রম বাড়াবেন তিনি। বিশেষভাবে বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে বাংলাদেশ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী কীভাবে ইতিবাচকভাবে কাজ করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেব। আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে কাজ করতাম, এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভেতর থেকে করার চেষ্টা করব। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে সত্যিকার অর্থে একটা উদার গণতান্ত্রিক পথে যেন বাংলাদেশ যাত্রা করে উঠতে পারে, সেই ভিত্তিটা স্থাপন করে দেওয়া।

এছাড়া ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকারের মেয়াদ এখনো ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের যেহেতু গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত একটি সরকার এবং অনেক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি, সেগুলো আমাদের করতে হবে। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসব। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এ সরকারের মেয়াদ শেষ করব।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে ‘সহকারী’ হিসাবে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রসমাজ আমাদের দেশের একটি বড় শক্তি। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা তাদেরও কাজের সুযোগ দিতে চাই। এ লক্ষ্যে উপদেষ্টাদের সঙ্গে ‘সহকারী উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ তৈরি করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমাদের উপদেষ্টা প্যানেলে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের মনোনীত করেছি এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমরা দুজন উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছি। এর পাশাপাশি উপদেষ্টাদের সঙ্গে সহকারী হিসাবে ছাত্ররা কাজ করার সুযোগ পাবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। যেহেতু আমরা আজই (শুক্রবার) দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি, আমরা আজ (শুক্রবার) থেকেই কাজ শুরু করব। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমরা এখন থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করে দেব।