• Sunday, May 4, 2025

দুই পুত্রবধূসহ লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

  • May 03, 2025

Share With

প্রায় ৪ মাস পরে সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ-ডা. জোবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ৫ তারিখ সকালে দেশে ফিরছেন। আমরা যতদূর জানি যে, সঙ্গে উনার দুই বউমার (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি) আসার কথা রয়েছে।

কেমন আছেন খালেদা জিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মোটামুটি। আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে উনি ডেফিনেটলি ভালো।’

কিভাবে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা উনাকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য পেয়েছিলাম, সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল রিজিয়নস। সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন যে, ওইটা (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) যদি শেষ মুহূর্তে না পাওয়া যায়, তাহলে উনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন। বাংলাদেশ বিমানে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ তারিখ (৪ মে) উনি রওয়ানা হলে ইনশাআল্লাহ ৫ তারিখ দেশে বেলা ১১টার দিকে এসে পৌঁছাবেন।

খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন, এসংক্রান্ত সব প্রস্তুতির কাজ আমরা করছি। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থায় সব কিছু জানানো হয়েছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি ৫ মে দেশে ফিরবেন।’

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। দেশে ফিরতে পুরোপুরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া না গেলেও লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুরো বিষয়টি তদারক করছেন। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী থাকবেন আটজন। দুই পুত্রবধূ ছাড়া আরও থাকছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিনুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা-ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।

এদিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজা’কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, ৪ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কথা রয়েছে। ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে ছেড়ে সিলেট হয়ে ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন। বিএনপির মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

এর আগে ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় তাদের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পরে এবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

জোবাইদা রহমানের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা চেয়েছে বিএনপি : ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর ৩০ এপ্রিল চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বিএনপি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসাবে ডা. জোবাইদা রহমানের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে ধানমন্ডির তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবনে’ থাকবেন। চিঠিতে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারটি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একজন সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগের সঙ্গে গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন চেয়েছে বিএনপি। এছাড়াও বাসায় পুলিশি প্রহরা এবং বাসার প্রবেশপথে আর্চওয়ে স্থাপনের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।

এক-এগারো সরকারের সময় ডা. জোবাইদা স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে চলে যান এবং এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন।