নাটোর-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৫ জন, মাঠে ৩
- Oct 06, 2018
আলোকিত ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসনে (সিংড়া) এখন পর্যন্ত ১৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা গেছে। এর মধ্যে বর্তমান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আওয়ামী লীগ থেকে তিনজন, বিএনপির থেকে ৮ জন, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিকল্পধারার একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। তবে ১৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও এখন পর্যন্ত মাঠে কাজ করছেন বিএনপির একজন এবং পলকসহ আওয়ামী লীগের দু’জন।
ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের দাবি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি থেকে একজন করে মনোনয়ন পেলে এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, এই আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭ জন।
পলকের দাবি, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে হাইটেক পার্ক। স্থানীয় তরুণদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্ম দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এ এলাকার ত্যাগী নেতাদের মধ্যে রয়েছে পলকবিরোধী ক্ষোভ। এই ক্ষোভ থেকেই এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুল ইসলাম।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই আসনে এমপি ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ। এর আগেও তিনি দুইবার এমপি ছিলেন এই আসনটিতে। পৌর বিএনপির সভাপতি শামীম আল রাজী একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও তার মৃত্যুতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে উপজেলা বিএনপির মধ্যে। বর্তমানে বিএনপির পক্ষ থেকে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট আটজন।
এর মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মন্টু, কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক দেওয়ান শাহিন, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, নজরুল ইসলাম, অপর সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন ওরফে ভিপি শামীম, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আনু ও পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদ। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তার বহিষ্কার চেয়েছেন বাকি ৭ প্রার্থী। এ বিষয়ে তারা জেলা বিএনপিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক বেলাল উজ্জামান, জাতীয় পার্টি এরশাদের দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান এবং বিকল্পধারা সিংড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আলী রাজ।
সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ও বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান মন্টুও শফিকুল ইসলাম শফিক।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওহিদুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজনই প্রার্থী রয়েছেন। তিনি পলক।
অপরদিকে শফিকুল ইসলাম শফিক এবং অধ্যাপক শামসুল ইসলামের দাবি, তারাও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, গত ১৪ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার ও বিলবোর্ড স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পলকের লোকজন সেগুলো ছিঁড়ে ফেলেছিল।
তার দাবি, পলকের প্রভাব আর ভয়ে সিংড়ার ত্যাগী নেতারা মুখ খুলতে পারেন না। আগামী নির্বাচনে এসব ত্যাগী নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষ পলককে ভোট দিতে চায় না। তাই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওহিদুর রহমান বলেন, পলকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা খুশি। তাই পলককে তারা আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তানা।
একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান মন্টু জানান, উপজেলায় একাধিক প্রার্থী থাকলেও সবাই তাকে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। এরপরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মী কাজ করবেন। তবে দাউদার মাহমুদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বিএনপি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান দাবি করেন, ৯ বছর সরকারি দলের সঙ্গে থাকলেও ক্ষমতায় ছিল না ওয়ার্কার্স পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ কৃষক শ্রমিক জনতার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে। তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের রাজনীতি করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, মহাজোট থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করবেন তিনি ও তার দল।
এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুর রহমান জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্টি এককভাবে নির্বাচন করতে পারে আবার জোটগতভাবে ও করতে পারে। পার্টি প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তার আলোকে কাজ করবেন তিনি।
সিংড়া আসনের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন দলের প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও মূলত এখানকার ভোটাররা বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের ভোটার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী হলে বিএনপি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে দাবি করেছেন সাধারণ ভোটাররা।