প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা
- May 05, 2025

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। আজ সোমবার সকাল ১১টায় স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট তাদের প্রতিবেদন পেশ করেন।
স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। এছাড়াও বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা তদারকি করবে।
তিনি জানান, কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত থাকবে এবং ১৭টি বিভাগের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন কমিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার আনার জন্য তারা যে সব সুপারিশ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো—সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং জনগণকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
কমিশন সকল স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট আইন আধুনিকায়ন এবং রোগীর সুরক্ষা, অর্থ বরাদ্দ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।
তারা যে নতুন আইনগুলো প্রস্তাব করেছে, সেগুলো হলো: বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের দাম নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, সহযোগী স্বাস্থ্য পেশাজীবী আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন।
ডা. আকরাম বলেন, সকলের জন্য সর্বজনীন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিশন ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবার পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছি।’
সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য খাতে জনবল নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের সুপারিশ করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েরা আক্তার, এমএম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান এবং ওমায়ের আফিফ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাপক এ কে আজাদকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে।
তারা হলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, গাইনোকলজিস্ট ডা. সায়েবা আক্তার, শিশু স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এম এম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল) ডা. মোজাহেরুল হক, আইসিডিডিআর’বির গবেষক ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআর’বির শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের উমায়ের আফিফ।