• Saturday, December 21, 2024

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান রপ্তানিখাত ‘সিরামিক শিল্প’

  • Sep 12, 2018

Share With

সিরামিক সামগ্রীর ব্যবহার এখন আর নিছক প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সবখানেই এখন সিরামিক পণ্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ঘর সাজানো ও অফিসের সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরণ হিসেবে সৌখিন মানুষের কাছে নানা রকমের দৃষ্টিনন্দন সিরামিক পণ্যের কদর দিন দিন বাড়ছে।

টাইলস ছাড়া যেমন বাড়ি নির্মাণ এখন আর অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না, সেই বাড়িতে সিরামিকস পণ্যের ব্যবহারও যেন অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ। আর বাড়িতে ও অফিসে সিরামিকের টি-টেবিল ও ঘর সাজানোর শো-পিস এবং বাসন-কোসন, চায়ের পেয়ালাসহ নানা ধরনের তৈজসপত্রের ব্যবহার তো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পকে বিশ্ববাসীর কাছে আরো ব্যাপকভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সফলভাবে দেশে প্রথমবারের মতো সিরামিক সামগ্রীর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৩০ নভেম্বর। ‘সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশ- ২০১৭’ নামক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চায়নাসহ মোট ১৩টি দেশের ৬০টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল।

গত পাঁচ বছরে সিরামিক খাতে উৎপাদন বেড়েছে ২০০ শতাংশ। বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। প্রধান রপ্তানি পণ্যের তালিকায় এ পণ্যের অবস্থান এখন সপ্তম। বছরে রপ্তানি আয় প্রায় পাঁচ কোটি ডলার। সিরামিকের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনা সিরামিকের একচেটিয়া দখল ঠেকাতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে গত বছরের মে মাস থেকে। ফলে ইউরোপীয় ক্রেতারা কম দামে সিরামিক পণ্য কিনতে বাংলাদেশের বাজারে ঝুঁকছেন। সরকারের প্রচেষ্টায় অন্যান্য পণ্যের মতো সিরামিক পণ্যেও শুল্ক মুক্ত সুবিধার আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ। এতে ইইউর ২৮ টি দেশে সিরামিক পণ্যের একচেটিয়া বাজার দখলের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান মতে- বর্তমানে ৫০টির বেশি দেশে যায় বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সিরামিক টেবিল ওয়্যারের রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ। আয়ের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। আগের তিন অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১০, ১৩ ও ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে সিরামিকের টাইলস রপ্তানি হয়েছে ৬০ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের সিরামিক শিল্প বর্তমানে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এই খাত থেকে ২০১৬-১৭ বছরে মোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই সিরামিক খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার।

সিরামিক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ওয়্যারস ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) এর তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে সিরামিক শিল্প কারখানার সংখ্যা ৮০টি। এসব সিরামিক কারখানায় আমাদের দেশের ৫ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে।

বিসিএমইএর তথ্যমতে, আমাদের দেশীয় বাজারেও সিরামিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে ব্যাপক হারে। গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজার বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সিরামিক টেবিল ওয়্যারের বাজার বেড়েছে ১৪ শতাংশ। বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি টাকা। সিরামিকের টাইলসের দেশী বাজার বেশ বড়। গত অর্থবছরে এ পণ্যের দেশী বাজার ছিল চার হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার।

নব্বইয়ের দশকে সিরামিক শিল্পের বিস্তার ঘটলেও গত দশকে সরকাররের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্রুত এর বিকাশ লাভ করেছে। এখন বছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরামিক পণ্যের দেশী এবং আন্তর্জাতিক বাজার প্রসার লাভ করেছে মূলত বর্তমান সরকার এই খাতকে বিশেষ গুরত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে। বিশেষ করে, সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় তুলনামূলকভাবে সুলভ মূল্যের গ্যাস এর সুবিধার কারণে সিরামিক শিল্প বিকাশ লাভ করেছে।

সিরামিক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামী পাঁচ বছর সিরামিক খাতের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন বজায় থাকলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পোশাক খাতের পর সিরামিক শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।