ভিয়েতনামী ডাবের চাষ করতে আগ্রহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা
- Sep 06, 2018
-চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি-
ডি এম কপোত নবী : আম, কাঁচা-পিতল, লাক্ষাসহ নানা কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাম রয়েছে সকল স্থানে। এ জেলাতেই রয়েছে বিশাল পরিশরের হর্টিকলচার সেন্টার। নিত্য নতুন গবেষনার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা। তেমনি ডাব উৎপাদনে এক সাফল্য পাওয়া গেছে সেখানে।
মাত্র আড়াই থেকে তিন ফুট এই গাছে প্রথম চোটে ফুল ধরেছে হর্টিকলচার সেন্টারে। এই অস্বাভাবিক ফুল দেখতে ভীড় করছে শত শত বিভিন্ন বয়সের দর্শক। মহিলারাও বাদ নেই।
ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছে এই ডাব গাছ। কয়েক জন কৃষি বিজ্ঞানী ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে ডাবের এই অস্বাভাবিক ফলন দেখে তারা দারুন ভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেন। চেয়ে বসেন চারা।
কিন্তু ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ তাদের চারা সরবরাহ করতে অসম্মতি প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। তারা বেশ কয়েকটি চারা খুবই গোপনে ব্যাগে পুরে দেশে নিয়ে আসেন।
এই ফলে কল্যানপুর হর্টিকালচারের বর্তমান উপ-পরিচালক ও গবেষক ড. সাইফুর রহমান ছিলেন। তাঁরা দেশে ফিরে গোপনে নিয়ে আসা চারা সম্প্রসারনের আধনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন গাজীপুরে। ফলে কয়েক লাখ চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হন। তারই ফলশ্রুতিতে কল্যানপুর হর্টিকালচারে মাত্র ৮টি চারা দিয়ে চাষ শুরু করেন। একই সাথে ১৩ হাজার ভিয়েতনামি ডাবের চারা এখানে এনে প্রতিটি পাঁচশত টাকা দামে বিক্রি শুরু করেন। ছোট চারা মাত্র আড়াইফুট লম্বা হওয়া মাত্র ফলন দিবে এমন খবরে এইসব চারার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আগ্রহী কৃষকরা। তারা (কৃষকরা) অনেকেই ২ থেকে শুরু করে ৮ একর পর্যন্ত ভিয়েতনামী ডাবের চারা লাগিয়ে বাগান করে ফেলেছেন।
ড. সাইফুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, অর্থনীতিতে বড় ধরনের সাফল্য আনতে ভিয়েতনামী ডাবের চাষ শুরু করা হয়েছে। শুধু মাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। দেশের অন্যান্য কৃষি ফার্ম ও একই ধারাই চারা বিক্রি করেছে। তিনি জানান মাত্র ৩৩ মাস বয়সের হলেই প্রথমে ফল আসবে গাছে। সেই ধারায় কল্যানপুর হর্টিকালচারের ৪টি গাছে ফুল এসেছে। দ্বিতীয় বছর থেকে ডাব আসা শুরু হবে। ডাবের পরিমান হবে ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিকাংশ ডাবের বাগারে বয়স ২১ মাস হয়েছে। ৩৩ মাস হলেই প্রথমে ফুল আসবে। পরের বছর ডাব। মানে ভিয়েতনামী এইসব বাগান মালিক, আগামী দুই বছর পেরিয়ে গেলেই অর্থকরী ফসল ডাব পাবে।
এইসব ডাবে পানির পরিমান ৭ থেকে ১০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত (এক কেজির কাছাকাছি)। অন্যান্য দেশী ডাবের তুলনায় দিগুন দাম পাবে। এ ছাড়াও অন্যান্য আরও ১২ ধরনের উপাদান থাকবে। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে। এ ছাড়াও বহু কৃষক মুখিয়ে রয়েছে নারিকেলের মাধ্যমে চারা তৈরী করে বিক্রি করে লাভবান হবে। এক কথায় ভিয়েতনামী এই ডাব ও নারিকেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশের আবহাওয়া ভিয়েতনামী ডাব চাষে বড় ধরনের সহযোগি পাবে। ফলে ডাবের ফলন কোন ধরনের বিঘœ ঘটবেনা।
এদিকে দিন দিন ভিয়েতনামী ডাবের চারার চাহিদা বেড়ে যাবর কারনে কল্যানপুর খামার ইতোমধ্যেই বড় সংখ্যার ভিয়েতনামী ডাব চারা পাঠাতে গাজীপুর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।
এই ডাব চাষে বড় ধরনের সুবিধা হচ্ছে সারের পরিমান অনেক কম লাগবে। সেচ সুবিধার তেমন একটা প্রয়োজন হবেনা। শুধু মাত্র খরার সময়ে পাতা বিবর্ণ আকার ধারন করলে সেচ সুবিধা সম্প্রসারনের প্রয়োজন পড়বে। অন্য মৌসুমে গাছের গোড়ায় আগাছা না জন্মে সে দিকে বড় ধরনের খেয়াল রাখতে হবে। অল্প খরচে অধীক লাভের আশায় ডাবের বাগান করবার জন্য তাই কৃষকরা এখন হর্টিকালচার সেন্টার থেকে চারা নেবার জন্য সিরিয়ালও দিয়ে রাখছে আগাম। আস্তে আস্তে তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়বে ভিয়েতনামী ডাবের আবাদ।