• Saturday, June 7, 2025

মণ নয়, কেজিতে আম বিক্রি হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের ৪ জেলায়

  • Jun 06, 2025

Share With

রাজশাহী বিভাগের ৪ জেলায় এখন থেকে মণ দরে আম কেনাবেচা করা যাবে না। শুক্রবার (৬ জুন) থেকে আম কেনাবেচা করতে হবে কেজি দরে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ এবং নাটোর জেলার আম সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে বর্তমানে আমের বাজার জমজমাট। এখনো বাজারে প্রতি মণে অতিরিক্ত আম নেন ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী অঞ্চলে এক মণ আম কেনার সময় আড়তদারেরা ৪২ থেকে ৫৫ কেজি পর্যন্ত আম নিয়ে থাকেন। তবে চাষিদের ৪০ কেজি বা এক মণেরই দাম দেন।

বিভিন্ন সময় এই ‘ঢলন’ প্রথা থামাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে কেজি দরে আম বেচাকেনা করার সাধারণ নির্দেশনা দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
 
তবে কেজি হিসাবে আমের বেচাকেনা হলে ঢলন নেয়া বন্ধ হবে বলে প্রশাসন মনে করছে। এই অবস্থায় সব জায়গায় একই ওজনে আম বিক্রি পদ্ধতি প্রচলনের জন্য গত ৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বিভাগীয় কমিশনারে কার্যালয়ে আসেন এবং বিষয়টি আলোচনা করেন। তারা সবাই বিভাগের সব জেলায় যেন একই পদ্ধতিতে আম কেনাবেচা করা হয়, তার পক্ষে একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করেন।
 
তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ এবং নাটোর জেলার আম-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সভা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। 
 
সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত আমের চাহিদা সারাদেশে বিস্তৃত। এই অঞ্চলের আমের গুণগত মান অত্যন্ত উন্নত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আম রফতানি হচ্ছে।
 
তবে আমের কেনাবেচার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে আমচাষিরা ওজন বা পরিমাপগত কিছু সমস্যায় আছেন। আমচাষিরা যখন আড়তে আম বিক্রি করতে যান, তখন আড়তদারেরা ৪২ থেকে ৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম কিনে থাকেন। আম যেহেতু পচনশীল পণ্য, সেহেতু কৃষকেরা এই পদ্ধতিতে আম বিক্রি করতে বাধ্য থাকেন। এতে কৃষকেরা প্রায়শই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন বা হচ্ছেন।
 
অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত বিভিন্ন জেলার আমচাষি, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা খোলামেলা আলোচনা করেন। কৃষকেরা একই ক্যারেটে বিভিন্ন আকারের আম সাজিয়ে বিক্রি করে থাকেন বলে কেউ কেউ জানান। সভায় আম ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা একটি কমিশন ঠিক করার প্রস্তাব করেন। আলোচনায় বিভিন্নজন তাদের সুচিন্তিত মতামত দেন। তবে সর্বসম্মতক্রমে কেজিপ্রতি দরে আম কেনাবেচার পক্ষে মতামত দেন।
 
আলোচনা শেষে সভায় সর্বসম্মতভাবে জাত, গ্রেড ও গুণগত মান বিবেচনায় আম প্রতি কেজি দরে খুচরা কিংবা পাইকারি যেকোনো পর্যায়ে বেচাকেনা করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আড়তদারেরা বেচাকেনার কোনো পর্যায়েই কোনো ধরনের কমিশন পাবেন না।
 
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, সারাদেশে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত শুক্রবার (৬ জুন) থেকে রাজশাহী বিভাগের সব জায়গায় একযোগে বাস্তবায়িত হবে। সভার এই সিদ্ধান্তগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
 
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সম্মিলিতভাবে সবাই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এবং যার যার অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ করা হবে। এদিকে, কেজি হিসেবে আম বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা থেকেই মাইকিং করা হয়েছে।