রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তিতে আলোচনা সভা
- May 17, 2025

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সভায় প্রধান অতিথি বলেন, ‘আমরা কারও দয়া চাচ্ছি না। নায্য অধিকার চাচ্ছি। এটা আমাদের দিতে হবে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘এতবছর ধরে ভারত আমাদের বঞ্চিত করেছে। তারা আমাদের প্রাণীকে তিলে তিলে হত্যা করেছে। তারা হত্যাকারী। তাদের বিচার হতে হবে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ। তিনি তার প্রবন্ধে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। বলেন, আগামী বছর ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি শেষ হচ্ছে। নতুন চুক্তি নবায়নের সময় গ্যারান্টি ক্লস, যা শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করে সেটা আবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফারাক্কার সমস্যাকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তার সমাধানে রাজনৈতিক চাপ দিতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। সমস্যার সমাধানে ঐক্যের বিকল্প নেই।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা আমাদের অভিশাপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে নদী বিশেষজ্ঞ পাঁচজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভারতের কাছ থেকে পানি আদায় করে নিতে হলে আমাদেরও নদী বিশেষজ্ঞ দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে নদী আইন নিয়েই একটা বিভাগ খোলা উচিত। আমাদের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা খুব প্রয়োজন। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব নিরূপণ করাও জরুরি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজ সভায় বলেন, ‘ভারত সব সময় গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রক্ষ্মপূত্রকে একই অববাহিকায় চিন্তা করে সমস্যা সমাধানের কথা বলে। এটি হলে হবে না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে ফারাক্কা বাঁধ অপসারণ করতে হবে। শুধু গঙ্গার পানি চাইলে হবে না। মূল দাবি হতে হবে বাঁধ অপসারণ।’
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক বেনজিন খানও। তিনি বলেন, ‘ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভাগিরথি নদীতে পলিমুক্ত পানি সরিয়ে নিচ্ছে। আর ভরামৌসুমে আমাদের পলিযুক্ত পানি দিচ্ছে। এতে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। বন্যায় আমরা ডুবে যাচ্ছি। ভারত এভাবে দীর্ঘমেয়াদে গণহত্যা চালাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘উজানের দেশ ভাটির দেশের অসম্মতিতে নদীতে কিছুই করতে পারবে না। অতিরিক্ত পানি তুলতেও পারবে না আন্তর্জাতিক আইনে। তাই এই বাঁধটাই অবৈধ। পানির হিস্যা বাদ দিয়ে আমাদের এই বাঁধ অপসারণের আন্দোলনেই জোর দিতে হবে। এ জন্য ভারতের প্রতিবেশী শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব বাড়াতে হবে। কারণ শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আগের সরকারের নানামুখী বাঁধা উপেক্ষা করে ২০১৪ সাল থেকে তারা দিবসটি উদযাপন করছেন। এ আন্দোলনে যুবসমাজ সম্পৃক্ত হয়েছে। তিনি সবাইকে মওলানা ভাসানীকে আরও বেশি করে জানার আহ্বান জানান। বলেন, ‘বিগত সরকার সামনে একজনকে দাঁড় করিয়ে আর কাউকে জানতে দেয়নি। আমি দাবি করব, পাঠ্যপুস্তকে যেন মওলানা ভাসানীকে নিয়েই একটা অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন- রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সংগঠক ত্বা-সিন খান। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন লেখক ফজলুল হক তুহিন ও সাংবাদিক সাদিকুল ইসলাম স্বপন।