রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি নির্মাণযজ্ঞে দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মাপারে তারুণ্যের স্বপ্ন
- Sep 22, 2018
রাজশাহীর পদ্মার পারে নির্মাণ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি। কয়েক মাস আগেও পুরো এলাকায় ছিল অবৈধ বসতি। সেখানে এখন মাথা তুলছে বহুতল ভবন। পদ্মাপারের এই নির্মাণযজ্ঞ তরুণদের ভবিষ্যত দিগন্ত বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির দ্বার উন্মোচিত হতে শুরু করেছে।
রাজশাহী মহানগরীর জিয়ানগর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে বিশাল এই তথ্যপ্রযুক্তির নগর। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি। সানফ্রান্সিসকো ও সান হোসে শহরের মাঝামাঝি ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা সিলিকন ভ্যালি ইন্টারনেট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেটির আদলে গড়ে উঠতে যাওয়া রাজশাহীর এ সিলিকন সিটিতেও তৈরি হবে বিশ্বমানের প্রযুক্তিপণ্য।
বুধবার নগরীর জিয়ানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিলিকন সিটি নির্মাণে ভূমি উন্নয়নের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান করছে কাজটি। পুকুরসহ উঁচু-নিচু পুরো এলাকাটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। সিলিকন সিটির ভেতরে পাঁচতলা একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণও এগিয়েছে অনেক দূর। আনোয়ার ল্যান্ড মার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজের ঠিকাদার।
সিলিকন সিটির ১২ তলাবিশিষ্ট মূল ভবনটি যৌথভাবে নির্মাণ করবে সামসুদ্দিন মিয়া এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, হামিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও পিইবি স্টিল এ্যালায়েন্স। সামসুদ্দিন মিয়া এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মুনির হোসাইন জানান, মূল ভবন নির্মাণে মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ভবন নির্মাণ শুরু হবে।
সিলিকন সিটি নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিত্তির কর্মকর্তা রাক্কিনী হালদার বলেন, সিলিকন সিটি নির্মাণের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বসতকারীদের পুনর্বাসন করে ভূমি অধিগ্রহণ। কাজের প্রথম ধাপেই সেটি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।
রাক্কিনী হালদার বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে সিলিকন সিটি চালু হবে। এতে প্রযুক্তিনির্ভর বিপুলসংখ্যক তারুণ্যের জন্য মিলবে স্বপ্নের নতুন ঠিকানা। খুলবে কর্মসংস্থানের দুয়ার। এ ছাড়া শিক্ষানগরী রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে সিলিকন সিটি।
রাজশাহীতে এ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তাদের প্রচেষ্টায় একনেকের এক সভায় সিলিকন সিটি নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৩২ একর জমির ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে চলছে এর নির্মাণকাজ। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এ সিলিকন সিটির কাজ শেষ হলে এখানে ১৪ হাজার তরুণের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে আরও ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এই সিলিকন সিটির মাধ্যমে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে রাজশাহীর তরুণদের মধ্যে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আখেরুজ্জামান বলেন, সিলিকন সিটি চালু হলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য আর দৌড়াতে হবে না। এটি আমাদের জন্য সুখবর, রাজশাহীর জন্য সুখবর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সিলিকন সিটির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হবে। বিপুলসংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। বাড়বে এ খাতে কর্মসংস্থান। কর্মের জন্য রাজধানীমুখী মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। তাই এটি নিয়ে আমাদের অনেক বড় স্বপ্ন।
সিলিকন সিটিকে রাজশাহীর স্বপ্ন হিসেবে উল্লেখ করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সাল নাগাদ রাজশাহীকে সারাবিশ্ব চিনবে।
মেয়র লিটন আরও জানান, বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে তথ্যপ্রযুক্তি অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ফেসবুক, গুগল, হোয়াটস এ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠান বা সেবা রাজশাহীতে তৈরি হবে। তৈরি হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ বিপুল জনশক্তি। তিনি জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজশাহীতে প্রথম ‘হাইটেক পার্ক’ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরবর্তিতে যার নাম দেয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। এটির মাধ্যমে এখন এ অঞ্চলের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তির স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ জন্য রাজশাহীর মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বলেও জানান লিটন। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী