• Monday, January 13, 2025

রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেওয়ার ‘এক্সিট পলিসি’ চান ব্যবসায়ীরা

  • Jan 12, 2025

Share With

দেশের বড় ও মাঝারি শিল্প খাতের রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক খাতের দায়দেনা থেকে মুক্তির জন্য ‘এক্সিট পলিসি’ চেয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা এই আহ্বান জানান।

একইসঙ্গে ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা এখনই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী না করে আগামী এক বছরের জন্য বিদ্যমান সুবিধা বহাল চেয়েছেন তারা।

ব্যবসা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো জানাতে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি ও ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা গভর্নরের কাছে মোট ৯ ধরনের সুবিধা চেয়েছেন।

বৈঠক শেষে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘একদিকে সরকার ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি করছে, অপরদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েই যাচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হচ্ছে। এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ শ্রেণিকরণ আরও জটিল করেছে। এভাবে আমাদের সুবিধাগুলো তুলে নেওয়া হলে ব্যবসা করা খুবই কঠিন হবে। তাই আমরা নীতিগত কিছু সুবিধা চেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান কীভাবে অবসায়ন হবে, তার স্পষ্ট কোনও নীতিমালা নেই। আমরা গভর্নরের কাছে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সিট নীতিমালা চেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান বড় শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের মনিটোরিয়াম সুবিধাসহ আগামী ১২ বছরে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছি।’

এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানের এক্সিট পলিসির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যাংক দায়ের ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ১ বছরের মনিটোরিয়ামসহ ১৫ বছর মেয়াদে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

একটি প্রতিষ্ঠান এক্সিট সুবিধা নিয়ে পরবর্তীকালে কীভাবে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার-উল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সব প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে খারাপ হয়ে যায় না। যে প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়েছে সেটির দায় পরিশোধের জন্য তার অন্য ভালো প্রতিষ্ঠানের আয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে।’

ব্যবসায়ী নেতারা ব্যাংকের একক গ্রাহকের ঋণসীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার দাবি জানান।

বর্তমানে একটি ব্যাংক ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে একজন গ্রাহককে মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর আগে সীমা ৩৫ শতাংশ ছিল, পরিবর্তন করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় বিজিএমইএ’র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিসিআই’র পরিচালক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এলএফএমইবি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল হাসান সোইল, রাভিডার সভাপতি আব্দুল হক, বিসিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম স্বপন, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাপ আহমেদ, বিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রিতি চক্রবর্তী, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, একসঙ্গে ঋণের সুদহার বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানো, বেতন বাড়ানো, প্রণোদনা দেন— এভাবে ব্যবসা চালানো কঠিন। কোনও দেশে এমনটা নেই। এজন্য আমরা চাই বড় শিল্পের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরের ঋণ সুবিধা এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হোক। ছোট শিল্পের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরের ঋণ সুবিধা চাই, যেখানে এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের সুবিধা থাকবে। এজন্য পৃথক সার্কুলার দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মর্টগেজ সম্পদ বিক্রির জন্য অনুমোদন নিতে হবে। ব্যাংকের একক গ্রাহকের ঋণসীমা আগের অবস্থানে নেওয়ার দাবি জানাই।

তিনি জানান, নগদ প্রণোদনার জন্য যে কোনও কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা দিতে ন্যূনতম ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগে, এরপর বিতরণ করতে ৮ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। এ সময় নামিয়ে আনতে হবে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে। ব্যাংক সুদের হার ৯ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা, যে সংকট সমাধান করা অসম্ভব। এ সমস্যা নিরসনের জন্য জোর দাবি জানাই।