শুচিবাই একটি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যা
- Oct 16, 2018
২৫ বছর বয়সী রহিমা খাতুন বাচ্চা নিয়ে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে হাজির হলো। ডাক্তার তার সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে ফেলল, খালি টেনশন আসে, কিছুতেই মাথা খালি হয় না। এই সমস্যা নিয়ে ৫ বছর যাবত ভুগছি, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, পরীক্ষা- নিরীক্ষায় কোনো রোগ ধরা পড়ে নাই, ওষুধ খেয়েছি ভালো হই নাই।’
কম বেশি টেনশনে ভুগেন সবাই কিন্তু এই টেনশনের কারণে যখন রোগীর কাজের ব্যাঘাত ঘটে, ঘুমের সমস্যা হয়, লেখাপড়ার বিঘœ ঘটে তখন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখান উচিত। কিন্তু সবশেষে এ রোগীটি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শক্রমে ওষুধ ও বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে এখন সুস্থ জীবনযাপন করছে। আসলে এ রোগীটি যে রোগে ভুগছেন সে রোগের নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার। শুচিবাইকে হিককাপ অব মাইন্ড (মনের ঢেকুর) বলে। জীবনে যে কোন সময়ে ২-৩% লোক এ শুচিবাইতে আক্রান্ত হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়- হসপিটালের বহির্বিভাগে যে পরিমাণ মানসিক রোগী আসে, তার ১০% এ ধরনের রোগী। পরুষ ও মহিলা সমানভাবে আক্রান্ত হয়, তবে টিনএজদের মধ্যে ছেলেদের তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। এ রোগটি সাধারণত বেশি হয় ২০ বছর বয়সে। বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতরা বেশি ভোগে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি অথবা আপনার ঘরের কেউ শুচিবাইতে ভুগছে-
* এই রোগের দুটি অংশ প্রথম অংশটি হলো বারবার চিন্তা আসা। রোগীরা প্রায়ই বলে থাকে, ডাক্তার খালি টেনশন আসে। কোন কোন রোগীর দিনের শেষে রাতের বেলায় শুরু হয় বিশেষ কোন ঘটনা অনেক অনেক বার মনে পড়ে। আবার কেউ কেউ কোন ঘটনা বলার জন্য স্বামীকে বার বার বিরক্ত করে অথচ যা একবার বললেই হয়।
* অপর অংশটি হলো চিন্তাকে কাজের অথবা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যাকে আমরা কম্পালশন বলি।
১. মাথায় সারাক্ষণ টেনশন তাকে। কেউ কেউ বলে একটা টেনশন গেলে অন্যটা আসে। কিছুক্ষণের জন্য মাথা টেনশনমুক্ত হয় না।
২. কেবল কল্পনা আসে।
৩. কোন কোন রোগীর তীব্র ইচ্ছা হয় অন্যকে ইনজুরি করা, গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেয়া, বিশেষ কোন জায়গায় গেলে ভয় পায় এটাকে অবসেশনাল ফোবিয়া বলে।
৪. কেউ কেউ একই ভঙ্গিতে গুনবে এবং ঘরের কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রাখবে। একটু এদিক-ওদিক হলে সবার সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দেবে।
৫. কারও কারও গোসল করতে অনেক সময় লাগে। বারবার পরিষ্কার হওয়ার পরও মনের ভেতর অপরিষ্কারের ঘৃণা থেকেই যায়। এখনও অনেক দেখা গেছে নিজের ২ মাসের বাচ্চাকে দিনে কয়েকবার গোসল করাচ্ছে ময়লার ঘৃণার কারণে।
৬. এটা যে একটা অমূলক চিন্তা তা রোগীরা বুঝতে পারে এবং শত চেষ্টা করেও মাথা থেকে বাদ দিতে পারে না। কেউ কেউ বলে একটা কিছু মাথায় ঢুকলে চরকার মতো ঘুরতে থাকে।
৭. তবে বাচ্চাদের উপসর্গগুলো কিছুটা আলাদা হয়। বারবার ওয়াশিং, চেকিং-এর কোন কিছু টাচ করার প্রবণতা থাকে। আর বেশি সচরাচর অবসেশন হয় জীবাণুর ভয় ও ডিজএস্টরের ভয়। তবে ছোটদের বেলায় বাধা দেয়ার ইচ্ছা নাও থাকতে পারে।
শুচিবাইর কারণে রোগীর কি কি সমস্যা হয়
১. মেয়েদের মাসিকের সময় অস্বস্তি বেড়ে যায়।
২. ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাদের শুচিবাই আছে তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে।
৩. কোন কাজ সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে, পরীক্ষার সময় কোন ছাত্রছাত্রী পেছনের পাতায় কি লিখেছে তা বার বার চেক করে। এই কারণে পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বরের উত্তর রিখে আসতে পারে না।
৪. বিষণœœতায় ভোগে প্রায় ৬৭% রোগী।
৫. কাজকর্মে ধীরগতি দেখা যায়।
৬. ঘুমের সমস্যা হয়।
৭. বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের অবনতি হয়। এতে করে ডিভোর্স রেট বেড়ে যায়।
শুচিবাইর পরিণতি
১. সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে ২/৩ অংশ রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
২. যেই রোগীর সমস্যা এক বছরের বেশি সময় ধরে থাকে তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগী বলে গণ্য হয়।
৩. রোগীর যদি নির্দিষ্ট কোন কারণ পাওয়া যায়, আগে চিকিৎসা শুরু হয়, বক্তিত্ব ভাল থাকে, উপসর্গগুলো অল্পদিন ধরে শুরু হয়ে থাকে এবং বেশি বয়সে হয় তাহলে উন্নতি বেশি হয়।
চিকিৎসা
চিকিৎসার মধ্যে:
১. ওষুধ
২. বিহেভিয়ার থেরাপি
৩. কাউনসেলিং
ওষুধ সাইকিয়াট্রিস্টদের পরামর্শক্রমে শুরু এবং চালিয়ে যাওয়া এবং মাঝে মধ্যে ফলোআপে আসা উচিত।
ডা. মোঃ দেলোয়ার হোসেন
সহকারী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট