• Saturday, December 21, 2024

সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের উচিত : রাষ্ট্রপতি 

  • Sep 25, 2018

Share With

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নিজেকে নিরপেক্ষ উল্লেখ করে বলেছেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি মনে করেন সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। আর এ নির্বাচনে আদর্শ ও নীতিবান ভালো চরিত্রের মানুষকে মনোনয়ন দিতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন ব্যক্তিকে বাচাই করে ক্ষমতায় আনতে জনগণকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে জেলার হাওড় অধ্যুষিত ইটনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

নাগরিক কমিটি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ ইসমাঈল হোসেনের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যে মধ্যে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএমসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অষ্টগ্রাম থেকে নাওগা এবং অষ্টগ্রাম-কাস্তুল-ভাতশালা রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেন। পরে হেলিকপ্টারযোগে তিনি ইটনায় পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে তিনি বিকেলে উপজেলার চারটি স্থাপনার উদ্বোধন করেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় ইটনায় তাঁকে দেয়া গণসংবর্ধনার জবাবে আগতদের উদ্দেশে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বাঙ্গালপাড়া থেকে নাওগা পর্যন্ত রাস্তা হবে। অনেকগুলো সেতুর নির্মাণ কাজসহ অলওয়েদার রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম থেকে যে কোনো জায়গায় যাতায়াত করতে পারবেন। তাছাড়া হাওড়ের প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়নের সাথে জেলা শহরের যোগাযোগ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ সময় তিনি প্রতিটি হাওড়েই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হবে উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বছর বছর সাবমার্সেবল রাস্তা করে দিবে না। এ জন্য হাওড়ের রাস্তায় কোনো ট্রাক্টর চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন।

রাষ্ট্রপতি হাওড়ের ভৌগলিক অবস্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরও বলেন, দীর্ঘ ৪৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আপনাদের ভালোবাসা আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছে। আপনাদের ঋণ আমি কোনোদিন ভুলব না। হাওড়ের শিকড়ের কথা ভুলেন না বরং জীবনভর এ হাওড় ও এলাকার মানুষদের নিয়ে চিন্তা করতেন। এ জন্য এখন শুধু দেশে নয় বিদেশেও এ হাওড়কে তিনি নতুনভাবে পরিচিত করিয়েছেন। এ সময় আয়োজিত সভাটি লোকজনের আগমনে বিশাল জনসভায় রূপ নেয়। ইটনা ও এর আশপাশ থেকে হাজার হাজার মানুষ রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুনতে নাগরিক সভায় যোগদান করেন।

রাষ্ট্রপতি হাওড়াঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি মনোযোগী হয়ে পড়াশুনা করার পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, শুধু শিক্ষিত হলে চলবে না, যে কোনো প্রতিযোগিতায় যাতে টিকতে পারে এ ব্যাপারে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। এ সময় তিনি উপস্থিত সকলের কাছে নিজের জন্য দোয়া চান। পরে রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যায় উপজেলাস্থ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওইদিন রাতে তিনি স্থানীয় ডাকবাংলোতে রাত্রিযাপন করেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সাবেক নির্বাচনী এলাকা জেলার হাওড়ের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন সফরে সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রামে অবতরণ করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ জেলায় এটি তাঁর দ্বিতীয় সফর। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে গত ২৪ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর গত ১১ মে বাবা হাজী তায়েব উদ্দিন ও মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করতে নিজগ্রাম মিঠামইনের কামালপুরে একদিনের প্রথম সফরে এসেছিলেন তিনি। পাঁচদিনের এই সফরে হাওড়ের তিন উপজেলাতেই রাষ্ট্রপতিকে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে।

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বাড়ির মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে রাষ্ট্রপতি বাবা হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করবেন। পরে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি মিঠামইন ত্যাগ করবেন।