• Monday, December 30, 2024

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়

  • Dec 14, 2024

Share With

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।

বাংলার মানুষের বিজয়ের প্রাক্কালে এমন পৈশাচিক গণহত্যা পাকিস্তানি হায়েনাদের পক্ষেই সম্ভব ছিল। রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের আজকের দিনেই সংঘটিত হয়েছিল বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য বেদনাবিধুর এই দিন। এ মাটির প্রিয় সন্তানদের লাশের গন্ধ যেন আজও বাতাসে ভাসে। সন্তানহারা মা, স্বামীহারা স্ত্রী, পিতাহারা সন্তানের করুণ হৃদয়ের কান্না আর রক্তক্ষরণ বহমান এখনো।

আজকের দিনে এ দেশের জনসাধারণের আরেকবার উপলব্ধি-‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারোর দানে পাওয়া নয়।/দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি/জানা আছে জগৎময়।’ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আজ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষের ওপর পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্বিচারে বাঙালি হত্যা, মাইলের পর মাইল ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ভৌত অবকাঠামো ধ্বংস করা, নারীদের সম্ভ্রমহানি-সবকিছুই করেছে তারা। কিন্তু বাঙালির রণকৌশলের কাছে তারা টিকতে পারছিল না। তাই বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে। রাতের অন্ধকারে বাসা অথবা কর্মস্থল থেকে শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে তারা হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা।

দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রাখা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরপরই বুদ্ধিজীবীদের নিকটাত্মীয়রা বধ্যভূমিতে অনেকের লাশ খুঁজে পান। তাদের নিথর দেহজুড়েই ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা। কারও কারও শরীরে একাধিক গুলিও ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে অনেককে হত্যা করা হয়েছিল। ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকের লাশ আবার তাদের প্রিয়জনরা শনাক্তও করতে পারেননি।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, খোন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভিন, কবি মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষ বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

মহান বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে।