১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস
- Dec 15, 2024
১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস, ১৯৭১ সালের এইদিনে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, গোলাম নবী সাটুসহ নাম না জানা হাজার-লক্ষ শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রাণপণ যুদ্ধ করে, বুকের রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসরদের কবল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে মুক্ত করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমায় ছিল দুটি সাবসেক্টর। একটি মোহদিপুর সাবসেক্টর, অন্যটি দলদলী সাবসেক্টর। মোহদিপুর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং দলদলী সাবসেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট রফিক।
মুক্তিযুদ্ধ মার্চ মাসে শুরু হলেও প্রথমদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। ১৯ এপ্রিল রাতে শহরে সেল বর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পাকিস্তানি বাহিনী। শহর দখল করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ডা. মেসবাহুল হক বাচ্চু, ডা. মইন উদ্দিন আহমেদ মন্টু, এ্যাডভোকেট রইস উদ্দিন, খালেদ আলী মিয়া, অ্যাড. হামিদুর রহমান হেনা, ভাষাসৈনিক এ্যাড গোলাম আরিফ টিপু, তৎকালীন ন্যাপ (ভাসানী) নেতা ভাষাসৈনিক এ্যাডভোকেট ওসমান গণি, শেরাজুল হক শনি মিঞা, শাহজাহান আলী মিঞাসহ তৎকালীন আওয়ামীলীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তৎকালীন ছাত্রনেতাসহ এলাকার মানুষকে স্বাধীনতায় উজ্জীবিত করেন। সংগঠকদের অনেকেই সরাসরি রণাঙ্গণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে সংগঠিত হতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় প্রশিক্ষণ নিতে ভারতেও পাড়ি জমান অনেকে। শেষের দিকে জেলার বেশকিছু স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে আহত ও নিহত হন অনেকে।
যুদ্ধের একপর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মকরমপুর ও আলীনগর পাকিস্তানি ঘাটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালালে, পাক হানাদার বাহিনী মহানন্দা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়।
১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চরবাগডাঙ্গা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হন এবং পাকিস্তানি সেনাদের বাংকার দখল করে নেন। ওইদিন প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন।
১৩ ডিসেম্বর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং ওইদিন পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। ওইরাতে হরিপুর ব্রিজের কাছে সংঘটিত যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর নায়েক নবির উদ্দীনসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা। এতে ৯ গ্রামবাসীও নিহত হন।
১৪ ডিসেম্বর শহরের রেহাইচর এলাকায় হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং তার মরদেহ সারাদিন ঘটনাস্থলে পড়েছিল। এ খবর পেয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধারা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং পরে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীন, লেফটেন্যান্ট রফিকুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট আব্দুল কাইউম খান নিজ নিজ বাহিনী এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনী নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে আবার তুমুল যুদ্ধ শুরু করেন।
১৫ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়। তবে কোন কোন গবেষক মনে করেন ১৫ ডিসেম্বরও যুদ্ধ হয়। সুতরাং পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় ১৬ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ওড়ানো হয় বিজয়ের পতাকা।