• Sunday, December 22, 2024

রাজশাহীতে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক : শোডাউন

  • Sep 17, 2018

Share With

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে চরম আকারে রূপ নিয়েছে গৃহবিবাদ। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে বিস্তার করেছে। পাল্টাপাল্টি শোডাউন চলছে রাজশাহীর প্রায় সবকটি আসনেই। এ নিয়ে দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরোধ এখন তুঙ্গে। জমেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পাহাড়ও।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এমপিদের কারণেই এ বিভাজন। নানান কর্মকান্ডে এমপিরা তৃণমূল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। তবে পাল্টা অভিযোগ এমপিদের। এদিকে দ্বন্দ্ব মেটাতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় তৃণমূল নেতারা এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। পাল্টা বক্তব্য রাখেন এমপিরাও।

ফলে বিরোধ মেটানো দূরের কথা, দূরত্ব ঘোচানোর ওই সভা শেষে এমপিদের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় নেতারা একটি সভার ডাক দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের এই দ্বন্দ্ব ভাবিয়ে তুলেছে দলের নীতি নির্ধারকদের। আর তাই নির্বাচনের আগেই তারা মিটিয়ে ফেলতে চান সেই বিরোধ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে এ সংক্রান্ত সভা হবে। আশা করা হচ্ছে সেখানেই জেলা আওয়ামী লীগের সমস্যাগুলো নিরসন হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এখনকার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত তিনটিতেই এমপিদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা।

তারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নৌকায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এসব আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় একাধিক নেতা এবার মনোনয়ন পেতে চান। এ কারণে নেতারা শোডাউন শুরু করেছেন। কার সভায় কে বেশি কর্মী দেখাতে পারে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ নিয়েই নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এতে দলের সংহতি ও শৃঙ্খলা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ বলেন, রাজশাহীতে এমপিরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করছেন।

এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। অনেক এমপির সঙ্গে এখন জামায়াত বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীরা খবরদারি করছেন। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে ব্যানার ফেস্টুন কাটা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। রাতের আঁধারে এসব কেটে ফেলা হচ্ছে। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই একই চিত্র। সম্প্রতি কয়েকশ বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার কেটে ফেলা হয়েছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থানীয় এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এসব টাঙ্গিয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকদেরও বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার। তবে সবচেয়ে বেশি কাটা হয়েছে নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরগুলো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। বিষয়টি তদন্ত করে এই ‘কাটিং পার্টি’র বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, রাজশাহী সদর আসনে না থাকলেও পাঁচটি সংসদীয় আসনে শোভা পাচ্ছে স্থানীয় এমপিসহ অন্তত ৩০ মনোনয়ন প্রত্যাশীর কয়েক হাজার বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার। এগুলো সবচেয়ে বেশি রয়েছেন, রাজশাহী-১, রাজশাহী-৩, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসনে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাটাকাটির ঘটনা ঘটছে রাজশাহী-৫ আসনে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকার এক আওয়ামী লীগ কর্মী আমজাদ হোসেন বলেন, সকালে দেখি এক মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিলবোর্ড পড়ে আছে। তো পরেন দিন দেখি আরেকজনের ফেস্টুন কাটা। এভাবে প্রতি রাতে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে প্রচারের এই বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডাঃ মনসুর রহমান জানান, লক্ষাধিক টাকা খরচ করে প্রায় এক হাজার ফেস্টুন দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টাঙ্গানো হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপির সমর্থকরা তার ফেস্টুনগুলো নষ্ট করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তারা। একই ধরনের অভিযোগ এ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদের। তারও বেশ কিছু বিলবোর্ডসহ ফেস্টুন রাতের অন্ধকারে কেটে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা জানান, আমারও কয়েক ফেস্টুন ব্যানার নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্য তৃতীয় পক্ষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান এই এমপি। – দৈনিক জনকণ্ঠ