• Saturday, November 23, 2024

সঞ্চয়পত্রের উর্ধমুখী বিক্রি দিয়ে অর্থবছর শুরু

  • Sep 23, 2018

Share With

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ৮ হাজার ২২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৫ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এই হিসাবে জুনের চেয়ে জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) জুলাইয়ে ৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাশাপাশি এই খাত থেকে সরকারের নিট ঋণও বাড়ছে। জুলাই মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নিট ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। গত জুন মাসে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল ৩ হাজার ১৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অবশ্য গত বছরের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার নিম্নমুখী ও ব্যাংকের প্রতি এখন মানুষের আস্থা কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে নিরাপদ বিনিয়োগের আশায় সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সঞ্চয়ীরা। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের প্রতি এখন মানুষের আস্থা কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংকে সুদের হারও এখন কম। এ কারণে তারা সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। তবে স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীদের চেয়ে এই খাতে বিনিয়োগ বেশি রয়েছে বড় পদের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।’

জানা গেছে, মূলত দুটি কারণে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। প্রথমত, গ্রাহকদের কাছে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যে কোন আমানতের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। এদিকে, বেসরকারী ব্যাংকগুলো তিন মাস মেয়াদী আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করার পর সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণেই এর বিক্রি বেড়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীর বাইরে সঞ্চয়পত্র কিনছেন বড় পদের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।’ জানা গেছে, তিন বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এর আগের অর্থবছরে ২০১৬-১৭ বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার কারণে গত অর্থবছরে সরকারের সুদ পরিশোধও বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১৯৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা (এর মধ্যে মুনাফা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ৮৯০ কোটি ৩২ লাখ টাকা)। আর বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুনে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে তিন হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মে মাসে সরকার এই খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছিল তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা, এপ্রিলে নিয়েছিল তিন হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। মার্চে তিন হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা নিট ঋণ নেয় সরকার। ফেব্রুয়ারিতে নিট ঋণ নেয় চার হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে ছিল পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, যা ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) থেকেও দুই হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য এই অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।