• Saturday, December 21, 2024

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক

  • Nov 20, 2018

Share With

মো.ইলমাল ইয়াকিন তালেবুন নবী :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হালকা শীত আর কুয়াশা মাখা ভোর নিয়ে হাজির হয়েছে অগ্রহায়ণ। আর অগ্রহায়ণ মানেই ধানকাটার উৎসব। সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। বর্তমানে মাঠে কৃষক ধান কাটতে ব্যস্ত। কৃষকের ঘরে উঠছে সোনার ধান। নতুন ফসলে ভরা কৃষকের ঘরে তৈরি হচ্ছে নানান ধরণের পিঠা। উৎসবের আমেজে কৃষাণ কৃষাণী ব্যস্ত সময় পার করছেন কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ ধান কাটা মাড়াই করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে ফলনও ভালো হচ্ছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও ধানের দাম কম থাকায় হাসি নেই কৃষাণ কৃষাণীর মুখে।

গত রবিবার ও সোমবার ধানক্ষেতে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর, চামা টোলা, বড় টাপ্পু, কাসসাট। অন্যদিকে সদরের আতাহির, জামতলা, নিমগাছি, উপরাজারামপুর, পলসা, গোবরাতলাসহ আরো কিছু এলাকায় কৃষকেদের ধান কাটতে দেখা গেছে। শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক ফজলু, আইনাল, বজলু, হারুনুর রশিদ, জিয়াউল হক, কাজেম আলীর সাথে কথা বললে তারা জানান, খুব ভাল ফলন হলে এক বিঘা জমিতে ধান হয় ৯ থেকে ১০ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমণ ৭ শ থেকে ৮ শ টাকা। কিন্তু এ ধান রোপণ করা থেকে শুরু করে মাড়াই করা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বিনোদপুর চামাটোলার কৃষক ডলার, শামিম, কামাল, নয়ন, সুমন, করিম জানান, ধানের ফলন ভালো হলেও ধানের দাম আমরা পাবনা। কারণ ধানের দাম অনেক কম। আমরা যে খরচ করেছি সেটাই উঠবে কিনা সন্দেহ আছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবী কৃষকের একমাত্র অবলম্বন ধানের দাম যেন বৃদ্ধি করা হয়।
এদিকে জেলার সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের কৃষক তাশেম আলী জানান, প্রতি বিঘায় আমন ধান আবাদে কৃষকের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২০ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম মাত্র প্রতি মণ ৬শ টাকা। কৃষকরা জানান, ধান বিক্রি করেই সংসার চালানো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ, পোশাক কেনাসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় আমাদের করতে হয়। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় এবারে কিভাবে চলব সেই চিন্তা সারক্ষণ ভর করছে মনের মধ্যে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৫৩ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আমনধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ মে.টন চাল। বর্তমানে মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রতি বিঘায় ১৬ থেকে ১৭ মণ। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে মাঠের সব ধান কাটা হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ও কৃষকেরা ধানের সঠিক পরিচর্যা করায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঞ্জুরুল হুদা আরো জানান, যে সব এলাকায় ধান ক্ষেতে সেচের ব্যবস্থা নেই সে সব জমির ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে যে সব ক্ষেতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ হয়েছে সে সব ক্ষেতে ধানের ফলন ভালো হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। মাছে ভাতে বাঙালির দেশে বড় অংশ দেশের কৃষক। ধান ছাড়াও তারা নানা রকম শাকসবজিও রোপণ করছে ক্ষেতে। ধান কাটা শেষ হলেই তারা জমিতে গম লাগাবেন বলেও জানান। সকলের তাই এখন একটাই প্রত্যাশা ধানের দাম যেন বৃদ্ধি করা হয়। তাহলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে, স্বার্থক হবে তাদের দিনরাত নিরলস খাটনি।