খ্যাতিমান আইনজীবী ও রাজনীতিক ‘শামসুল হকের’ মৃত্যুবার্ষিকী
- Apr 06, 2019
মাহবুবুল ইসলাম ইমন :
খ্যাতিমান আইনজীবী, রাজনীতিক ও সমাজসেবী এ্যাডভোকেট শামসুল হকের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৬ সালের এইদিনে (৬ এপ্রিল) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিকরামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে এ্যাড.শামসুল হক জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আজিজুর রহমান এবং মাতা নূরজাহান বেগম। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার সপ্তম সন্তান।
১৯৬৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৬৮ সালে বি.এ পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে তিনি সেই সময় তরুণদের সংগঠিত করেন।
১৯৭২ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চাকুরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে রাজশাহী জেলা জজ কোর্টের তৎকালীন সিনিয়র আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের তত্ত্বাবধায়নে ১৯৭৩ সালের ৩০ জানুয়ারী থেকে ওকালতি জীবন শুরু করেন। ১৯৭৫-৭৬ সালে নবাবগঞ্জ মহকুমা কোর্টে যোগদান করেন। মৃত্যুঅবধি সেখানেই তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৩-২০০২ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের (৩ বার) দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত পাবলিক প্রসিকিউটার (পি.পি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাড.শামসুল হক। সেই সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্টের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ক্লায়েন্টদের অর্থনৈতিক, আইনী সহযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করেন তিনি।
৬০ এর দশকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং ৭০ এর দশকে ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে ন্যাপের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তখন ন্যাপের জেলা সভাপতি ছিলেন এ্যাড.নজরুল ইসলাম। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং ১৯৯১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অত্যন্ত সফলতার সাথে প্রায় এক দশক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন ডা.আ.আ.ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু)। পরবর্তীতে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক-১ এর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়গুলোতে বিভিন্ন মামলা-মকাদ্দমা বিনা পয়সায় পরিচালনাসহ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিভিন্ন আইনী সহযোগিতা প্রদান করেন। ৯০ এর দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ১/১১ এর দু:সময়ের প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট রাজনীতিক এ্যাড.শামসুল হক। ২০১৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিশু শিক্ষা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অন্ধকল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগার, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূণ দায়িত্ব পালন করেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী এ্যাড.শামসুল হক। দীর্ঘদিন (মৃত্যুঅবধি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের দারুল হাদিস মাদ্রাসা ও খালঘাট গোরস্থান কমিটির সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নামোশঙ্করবাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক শামসুল হকের স্ত্রীর নাম মোয়াজ্জেমা হক। মোয়াজ্জেমা হক সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিশু শিক্ষা নিকেতনে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের সুযোগ্য কন্যা এ্যাড.ইয়াসমিন সুলতান রুমা বর্তমানে জাতীয় মহিলা সংস্থা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
খ্যাতিমান আইনজীবী, রাজনীতিক ও সমাজসেবী এ্যাড.শামসুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের’ পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা…