চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকাগুলোতে নকল মোবাইল বিক্রির ব্যবসা : প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ
- Aug 18, 2018
ডি এম কপোত নবী :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকাগুলোতে চলছে রমরমা নকল মোবাইল বিক্রির ব্যবসা। প্রতিনিয়ত দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট বিক্রি করা হচ্ছে। যা বেশিরভাগ নকল সেট। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভাল ফোনের আশায় উচ্চ মূল্যে সেট কিনলেও তা বেশি দিন টিকছে না নকল হওয়ায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে যেমন বাড়ছে জনসংখ্যা ঠিক তেমনি বাড়ছে মোবাইল এর গ্রাহক। সহজে যোগাযোগের জন্য সব বয়সী মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। নানা ধরণের নামীদামি কোম্পানির মোবাইল সেট বিক্রি হচ্ছে বাজারে। যে যার মত কিনে ব্যবহার করছে মোবাইল ফোন। দিন দিন তাই বাড়ছে মোবাইল ফোনের ব্যবসা। এরি সুযোগে হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাও। প্রশাসনের তৎপরতায় উদ্ধারও হচ্ছে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন।
জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কানসাট ও শিবগঞ্জের প্রায় ১০ টি বাজারে ব্যাপক হারে নানান ধরনের ফোন খুবই কমদামে বেচাকেনা হচ্ছিল। যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাচ্ছিল এইসব বাজারে। এসব সস্তা দামে পাওয়া মোবাইল ছিল ভারতীয়। কোনটা একেবারে আনকোরা নতুন, আবার কোনটা চোরাই। চোরাকারবারিদের মাধ্যমে এসব মোবাইল মজুদ করত সীমান্তের মোবাইল ব্যবসায়ীরা। এসব মোবাইল ভারতের তৈরি। তবে বেশিরভাগ মোবাইল ছিল চীনের তৈরি। যা নেপাল ও মিয়ানমার হয়ে ভারতে ঢুকত বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের বাজারগুলোতে নানা ধরনের মোবাইল সেট কম দামে পাবার নিশ্চয়তার কারণে প্রশাসন ছিল খুবই বিব্রত। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছিল না কম দামে পাওয়া মোবাইল আসা। শেষ পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ মাঠে নামে। তারা শিবগঞ্জ, কানসাটসহ প্রতিটি ইউপি হেড কোয়ার্টারের বাজারে তল্লাশি দিয়ে আটক করে কয়েক কোটি টাকার মোবাইল ফোন। মোবাইল আসা একেবারে বন্ধ না হলেও গতি কমে যায়।
এবার ঘটছে ভিন্ন চিত্র। ভারতীয় মোবাইল দোকানদারেরা বদলি প্রতিশোধ নিতে চোরাকারবারিদের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে নানা ধরনের মোবাইল যাওয়ার মধ্যে সিংহভাগ স্মার্ট ফোন যেন ভারতে নিয়ে আসে। এবার ভারতীয় ও বাংলাদেশী চোরাকারবারিরা যৌথ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারের নামীদামী মোবাইল দোকানে হামলা দিয়ে চুরি করে সেই মোবাইল ভারতে পাঠাচ্ছে। শুরু হয়ে যায় কাজ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারের চোর ও ছিনতাইকারীদের কাজে লাগিয়ে শুরু করে মোবাইল দোকানে চুরি। যার প্রতিশ্রুতিতে এই জেলা শহরের বড় ইন্দারা এলাকা মোড়ের দুটি বাণিজ্যিক ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত একই মালিকের দুটি মোবাইল দোকানের শোরুম ও বিক্রয় কেন্দ্রে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিককালে। অভিনব কায়দা দিয়ে চোরেরা তালা খুলে স্যামসাং এক্সক্লুসিভ ব্রান্ডশপ থেকে একই সঙ্গে ১১৪ টি ও নকিয়া ৭০টি নতুন মোবাইল সেট নিয়ে যায়। যার মূল্য প্রায় ৩০ লাখের কাছাকাছি। সকাল হলেই এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় পুরো জেলায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক মাঠে নামলেও এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে রাতারাতি এসব দামী স্মার্ট ফোন পার করে দিয়েছে সীমান্ত দিয়ে ভারতে। যদিও পুলিশ ১২ জনকে আটক করে তাদের তৎপরতার জানান দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধার হয়নি। যদিও শোরুমের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুই চোরের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
একাধিক সূত্র তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো রাজশাহীসহ প্রায় ৩০টি জেলা শহর হতে একই কায়দায় চুরি যাওয়া মোবাইল ভারতে পাচার হয়েছে। বাকি জেলাসমূহে একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। নেপাল, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পাওয়া মোবাইল সেট এখন ভরতের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া গেলেও মানের দিক দিয়ে খুবই নিম্নমুখী। ভারতে পৌঁছামাত্র একাধিক প্রযুক্তি বের করে নিয়ে নিম্নমানের মোবাইলে পরিণত করে। যার কারণে এসব মোবাইল কিছুদিন ব্যবহার করার পর অচল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশও অধিকাংশ ডিলার স্যামসাং, নকিয়া, সিম্ফোনিসহ প্রায় ৩২টি কোম্পানির মোবাইল বেচাকেনা করলেও তা প্রকৃতপক্ষে ১ নং না হয়ে ২ নং সেট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, কোরিয়াসহ প্রায় ১০টি দেশ থেকে ব্যক্তিগত কিংবা চোরাকারবারির মাধ্যমে যেসব মোবাইল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট হয়ে আসে তার অধিকাংশ কিনে থাকে এক শ্রেণীর সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী চক্র। তারা চড়া মূল্য দিয়ে এসব বিদেশী সেট কিনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিকাংশ পার্টস বা যন্ত্রাংশ বের করে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে দুই নম্বর সেটে পরিণত করে নামী দামী শোরুমে রেখে দেয়। পরবর্তীতে এইসব স্মার্ট ফোন যারা ব্যবহার করে তারা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। সেটগুলো অরিজিন্যাল না হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা কিছুদিন ব্যবহারের পরে নানা ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়।
ভারত ও বাংলাদেশের অধিকাংশ শোরুমে দামী ও নামকরা প্রায় ৩০টি কোম্পানির মোবাইল বেচাকেনা বা পাওয়া গেলেও সার্ভিস সাধারণত দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। কারণ একটাই অধিক মুনাফার লোভে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী মূল্যবান পার্টস বের করে নিম্নমানের পার্টস সেট করে এসব মোবাইল বাজারে ছাড়ে। তাই এর সার্ভিস দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে অরিজিনাল মোবাইল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে একটু অনুসন্ধান করলেই, পৃথক মোবাইল পাওয়া যায় অপর দিকে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রয়েছে যারা মানসম্পন্ন মোবাইল ইমপোর্ট করে না। তারা পূর্বেয় সেই দেশ সফর করে তাদের নাম ব্যবহার করে দুই নম্বর সেট পাঠাতে বলে এবং সংঘবদ্ধ চোরাইদলকে পুষে থাকে। কোন দোকানদার অরিজিনাল ১ নং সেট বিক্রি করলে তার দোকানে চোরাইদলকে ভিড়িয়ে দিয়ে সর্বশান্ত করে চলে এস। এসব সেট নিয়ে পরে ভারতে পাচার হয়ে যায়। তবে এখনও সীমান্ত বাজারে কমদামে স্মার্ট ফোন কেনাবেচা হচ্ছে। তবে এসব মোবাইলের অধিকাংশ ভুয়া, ফেক ও দুই নম্বরী বলে জানা গেছে। প্রতারনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর রাভবান হচ্ছে দু নম্বর মোবাইল সেটের ব্যবসায়ীরা