বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বা ২০ কোটি ২২.৫ লাখ ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)। আর্থিক খাতে কারিগরি সহযোগিতা করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেশটিতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।পদ্মায় বাংলাদেশের ইআরডি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি দ্য ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ গ্র্যান্ট অ্যাগ্রিমেন্টের (ডিওএজি) ষষ্ঠ সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শাহাবুদ্দিন এবং ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড জে এশলিম্যান নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন।অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের সফররত মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুসহ অন্যরা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।এ বিষয়ে ইউএসএআইডির উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছি।এর আওতায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এখন চুক্তি অনুযায়ী কাজ করব। এই চুক্তি মূলত সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি বাংলাদেশের জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি আনতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। আমরা স্বাস্থ্য ও শাসনব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তরুণদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে তারা যাতে দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে নজর দিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণ এখানে মূল অগ্রাধিকার।’ইউএসএআইডির উপসহকারী বলেন, এটি কোনো অ্যামেন্ডমেন্ট নয়, এটি নতুন চুক্তি।অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি নতুন অর্থায়ন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা আগামী দিনে একসঙ্গে আরো কাজ করার প্রত্যাশা করছি।’এদিকে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়—বাংলাদেশের নব উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করব। এ লক্ষ্যে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়ন ঘিরে তাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো দুই দিনের সফরে গতকাল বাংলাদেশে এসেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। গত শনিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের সহকারী আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। পরে বিকেলে দিল্লি হয়ে ঢাকায় পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।পাচারের অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশবিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা চেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সব নিয়ে আলাপ হয়েছে। পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে।তিনি বলেন, ‘আমরা আজ মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমাদের মূল আলোচনা ছিল তাদের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডির সঙ্গে। বিশেষ করে আর্থিক সংস্কার, আর্থিক খাতে যে সহযোগিতা দরকার সেটা। দ্বিতীয়ত বাণিজ্যের; এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন এবং বাণিজ্যে বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা বা বাজার এক্সপ্লোর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোব, তারা সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটার যে চুক্তি আগে হয়েছিল, সেটার সঙ্গে আরো ২০০ মিলিয়ন যোগ করা হয়েছে। আগে যা ছিল তার সঙ্গে এটি যুক্ত হয়েছে। তার মানে আরো বাড়তি টাকা তারা দেবে। কর সংস্কারের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সব আলাপ হয়েছে।দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ের সময় এক প্রশ্নের জাবাবে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খুব ব্রডলি ফিন্যানশিয়াল সেক্টরের রিফর্ম নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে এক্সপার্টিজ (দক্ষতা) আছে, সেটা হয়তো আমরা ব্যবহার করব। কিন্তু এই আলাপ কেবল শুরু হয়েছে, এর চূড়ান্ত রূপ পেতে একটু সময় লাগবে।’পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে এই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসতে পারে।সূত্রঃ ইত্তেফাক, কালের কন্ঠ, যুগান্তর, প্রথম আলো