• Thursday, November 21, 2024

নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে

  • Oct 19, 2018

Share With

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে কয়টি উচ্চ বিদ্যালয় আছে তার মধ্যে নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যা টাউন হাইস্কুল নামেই পরিচিত। শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়টির আমুল পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছেলে-মেয়ে উভয়ই পড়া লেখা করছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিকক্ষ মো. হাসিনুর রহমানের ঐকান্তিক ইচ্ছায় একটু একটু করে টাউন হাইস্কুলের শিক্ষার মান বাড়ছে। সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এরই মধ্যে ৪ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনের বিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেছেন। যার নির্মাণ কাজ অচীরেই শুরু হবে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন হাসিনুর রহমান। 

বৃহত্তর রাজশাহীর প্রতিচ্ছবি-দৈনিক আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ অনলাইন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ডি এম কপোত নবী কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর কি স্বপ্ন দেখেছিলেন

হাসিনুর রহমান : আমি এখানে যোগদানের আগে রাজশাহীর তানোর স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করি। সেখান খেকে কিছুদিন পর চলে আসি গোদাগাড়ী দি-গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর যোগদান করি। এ স্কুলে দীর্ঘ ১৬ বছর কাটিয়েছি। আমি প্রায় ২৭ বছর যাবৎ সুনামের সাথে শিক্ষকতা করছি। আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের সময় স্বপ্ন দেখেছিলাম ছেলে মেয়েরা যেন ভালো লেখা পড়া করে ভালো ফলাফল অর্জন করে। এখন অনেক খানি মান বেড়েছে এবং আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে লক্ষেই দায়িত্ব পালন করছি।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : কেমন দেখতে চেয়েছিলেন নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়

হাসিনুর রহমান : প্রথমত শহরে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে, টাউন হাইস্কুলে যারা মেধাবী নয় শুধুমাত্র তারাই এখানে ভর্তি হত। সে সময় স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম ছিল। আমি যোগদান করে প্রথমেই স্কুলের শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করতে থাকি। যার ভেতর আমার স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকম-লি আমাকে সর্বদা সহায়তা করেছেন। আমি চেয়েছিলাম বিদ্যালয় যেহেতু শিক্ষার জন্য তৈরি তাই শিক্ষার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা কেমন

হাসিনুর রহমান : কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। সেটাই ঘটেছে আমার সাথে। জরাজীর্ণ ভবনকে জোড়াতালি দিয়ে চেষ্টা করেছি ভবন ঠিক রাখার। অবকাঠামোর দিক থেকে পুরাতন ভবনটিকে নতুন ভাবে রঙ করিয়ে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করেছি। স্কুলে রুমের অভাবে অনেক কিছু থেকেই পিছিয়ে ছিলাম আমরা। আমি যোগদানের পর মাননীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরী হয়েছে এখন। বিদ্যালয়ে এখন ১৭ টি কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয়। যা অতীতে ছিল না।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বিদ্যালয়টি নিয়ে কতটুকু এখন আশাবাদি

হাসিনুর রহমান : আমি প্রথমেই বলেছি, একা কারো পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। বিগত সরকারের আমলে এমপি বা অন্য উচ্চ পর্যায়ে আমি, সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম অনেক দৌঁড়াদড়ি করেছি কিন্তু কেউ সহায়তার হাত বাড়ায়নি। তবু আমি অটল থেকেছি। পিছু হটিনি। বর্তমানে আমার এ বিদ্যালয়টিতে ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা প্রতেকেই মেধাবি এবং অত্যন্ত যতœসহকারে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। যার ভেতর ৫ জন নারী শিক্ষকও রয়েছেন। রয়েছেন ১ জন গ্রন্থাগারিক ও ৪ জন কর্মচারী। স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান বাড়াতে চালু করেছি বৃত্তির। আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার মেধা বৃত্তি, সেকান্দার ফাউনন্ডেশন এর মাধ্যমেও বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মমতাজ বেগমও মেধাবিদের বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বিদ্যালয়ে মেয়েদের পাঠদান সম্পর্কে কেমন ফল পাচ্ছেন

হাসিনুর রহমান : আপনি জানেন আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পরেই এই বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা করি। যা এখন পর্যন্ত চলছে। আমি খুব আশাবাদী তাদের নিয়ে। অন্যান্য স্কুলের ন্যায় এখন অনেক অভিভাবক স্কুলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ভর্তি করছেন। পড়ালেখার মান ভালো হবার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আমার জন্য এক বিড়াট অর্জন। অতীতে টাউন হাইস্কুল নিয়ে মানুষের ভেতর যে ভূল ধারণা ছিল তা আজ আস্তে আস্তে কেটে গেছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫শ-এর কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী পড়া লেখা করছে। প্রতিটি ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম শিক্ষার্থীকে আমরা পুরস্কুত করে থাকি।

 

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বিদ্যালয়টিকে কেমন রেখে যেতে চান

হাসিনুর রহমান : নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখান তেকে শিক্ষা অর্জন করে দেশ এবং দেশের বাইরে বড়বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন এবং করছেন। আমি যেহেতু শিক্ষক তাই এ স্কুলের শিক্ষার মান যেন সর্বদা বজায় থাকে সেটাই দেখতে চাই। কিছুদিন পর বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নতুন ৪ তলা ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে। ভবনটি তৈরি হলে আশা করছি ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। সুনামের সাথে মাথা উঁচু করে নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় পাঠদান অব্যাহত রাখবে এটাই আমার চাওয়া, আমার স্বপ্ন।

আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন

হাসিনুর রহমান : আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সন্তান। হরিপুরে আমার বাড়ি। বিবাহিত জীবনে আমি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের পিতা । ছোট বেলাতেই মেয়ে গেছে। ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করছে। ব্যক্তি জীবনে ইসলামপুর ছয় রশিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটাইডুবি উচ্চ বিদ্যালয়, শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত আছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠণিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সকলের সহযোগিতায় যেতে চাই আরো বহুদূর। শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলকে নিয়েই কাজ করতে চাই।