চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ
- Oct 26, 2018
ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে। তাই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে জেলার সর্বত্র। জেলায় মোট আসনের সংখ্যা মাত্র তিনটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১ আসনটি জেলার সর্ববৃহৎ এলাকা। পুরো শিবগঞ্জ উপজেলা চাঁপাই-১ আসনের আওতাধীন। এই আসনে ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়ন পদ্মা নদী সংলগ্ন। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দরসহ দেশের সর্ববৃহৎ আম বাজার কানসাট এই এলাকার মধ্যে।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৪ জন। আম বাগান রয়েছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর। এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা আম ফলের ওপর। দীর্ঘদিন এই আসনটি বিএনপির নিয়ন্ত্রণে থাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন হয়নি। এখানে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণে এবং মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যাও আনুপাতিক হারে অনেক বেশি।
স্বাধীনতা পরবর্তী এখানে দুটি বড় আন্দোলনে মানুষ খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি বিদ্যুত আন্দোলন ও অপরটি সাঈদীকে চাঁদে দেখা নিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে কানসাট বিদ্যুত কেন্দ্র বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আওয়ামী লীগ প্রথম বারের নির্বাচনে সফলতা অর্জন করে। ব্রিগেডিয়ার (অব) এনামুল হককে দাঁড় করিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে। দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে কানসাট বিদ্যুত আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীকে মনোনয়ন দিলে জয় ছিনিয়ে আনে। আওয়ামী লীগ দুই টার্মে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর বয়ে যায় উন্নয়নের জোয়ার। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
তবে যে কেউ মনোনয়ন পেলে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাকে সমর্থন দিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমে পড়বে। বিজয়ের বিষয়ে এখানে এবারও আওয়ামী লীগ আশাবাদী। তবে দ্বিতীয় দল বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছে। তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণে মনোনয়ন নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও তারা কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘদিনের বৈরিতা রয়েছে। তাই তারা কোন ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপিকে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকেই জামায়াত কোন ভাবেই মুক্তিযোদ্ধাকে ছাড় দিতে রাজি নয়। যদিও এই আসনে বিএনপির লড়াকু সৈনিক বেগম জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহজাহান একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। জামায়াত তাই বিএনপির এই প্রার্থীকে ছাড় দিতে কোন ভাবেই রাজি হচ্ছে না।
এছাড়াও এবার বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রার্থী রয়েছে। উল্লেখ্য, জেলায় এক মাত্র এই আসনে বিএনপির শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। তবে নানান আন্দোলনে যারা ভারতে পালিয়ে রয়েছে এদের সঙ্গে জামায়াতের আগে থেকেই সুসম্পর্ক রয়েছে। জেলায় একাধিক জঙ্গী গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সঙ্গে জামায়াতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সব মিলিয়ে শিবগঞ্জকে সন্ত্রাসের জনপদ বলা হয়ে থাকে। এই উপজেলায় একটি স্থলবন্দর থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে। এই বন্দর দিয়ে বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য যথা অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক বেশি আকারে এসে থাকে। তারপরেও আওয়ামী লীগ এখানে এখন সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী ও ক্যাডারভিত্তিক দলে পরিণত হয়েছে। বিধায় ভোট হলে সব কিছু আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনটি বরেন্দ্র অঞ্চলের তিনটি উপজেলা নিয়ে। শিবগঞ্জের কাছাকাছি একটি উপজেলা ভোলাহাট। যার সিংহভাগ বিল অঞ্চল। তবে এই উপজেলা থেকে পশ্চিম বাংলার মালদহ, ইংরেজবাজার আইহো খুবই কাছাকাছি। অপর দুটি উপজেলা গোমস্তাপুর ও ইলামিত্রের নাচোল। তিনটি উপজেলার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭২ জন হলেও গত দুই টার্মে নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের। এই আসনে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও সব চেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন প্রথম টার্মের এমপি জিয়াউর রহমান। তার আমলে নজরকাড়া উন্নয়ন জনগণের মনে দাগ কেটে রয়েছে।
বর্তমান এমপি গোলাম মোস্তাফা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও জনপ্রিয়তায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তার পিতা গোমস্তাপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একবার রহনপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আমলেও প্রভূত উন্নয়নমূলক কাজ হলেও প্রথম বারের এমপি জিয়াকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তাই এবারও জিয়াউর রহমান মনোনয়ন দৌড়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তিনি ৭৫ পরবর্তী বিএনপির কাছ থেকে আসনটি প্রথম ছিনিয়ে এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এবারও তিনি সেই পথে হাঁটছেন। পাশাপাশি বিএনপির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তারেক জিয়ার একান্ত ভালবাসার মানুষ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এই উপজেলায়। তবে আরেকটি নাম বেশি শোনা যাচ্ছে ও নির্বাচনী গণসংযোগ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সভাপতি সৈকত জোয়ার্দার। তিনি আশাবাদী নৌকার মনোনয়ন পাবার ক্ষেত্রে। তবে ভোলাহাট উপজেলার ভোটের ওপর ভাগ্য নির্ধারণ হবে কে এমপি হবেন।
জেলার সব চেয়ে আলোচিত আসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩। এটি জেলার সদর আসন। ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৪ জন। এই উপজেলায় একান্তর পরবর্তী এত উন্নয়ন আর হয়নি। সমগ্র চরাঞ্চলকে তিনি শেখ হাসিনা সেতুর মধ্য দিয়ে জেলা শহরের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। রাস্তাঘাটের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। কোন কাঁচা রাস্তা নেই। সেতু ও কালভার্ট হয়েছে অসংখ্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটিও কাঁচা নেই। প্রায় প্রতিটিতে বহুতল ভবন হয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেন জেলা শহরে আনার বিষয়ে আমনুরা রেল জংশনে একটি বাইপাস লাইন নির্মাণ করেছেন। সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে এই উপজেলায়। যার কারণে তিনি এখন একেবারে লাইম লাইটে এসে পড়েছেন। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পাশাপাশি বিএনপি চলে গেছে তৃতীয় স্থানে। জামায়াত প্রার্থী ঢাকা মহনগর জামায়াতের আমির বুলবুল একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের। কারণ এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের ভোট ব্যাংক রয়েছে। যা ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে ফেলেছে। এই মুহূর্তে ভোট হলে আওয়ামী লীগ অনেক ওপরে থাকবে বেল ধারণা করা হচ্ছে। জেলার তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। -সংকলিত জনকণ্ঠ