• Thursday, April 18, 2024

৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে নানা ত্রুটি

  • Oct 12, 2018

  • সাড়ে তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সাড়ে ৭ বছরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্নমানের কাজসহ নানা ত্রুটি ধরা পড়েছে দেশের ৩৭টি জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রয়েছে ধীরগতি। ফলে সাড়ে তিন বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যাচ্ছে সাড়ে ৭ বছর। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় যাবে চার বছর। সেই সঙ্গে দফায় দফায় বেড়েছে খরচও। প্রকল্পটি মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে দুই পর্যায়ে ৪৭৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৮৯৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ১১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে আসে এ চিত্র।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালক নূর আহমেদ বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনটা আমরা হাতে পেয়েছি। এটি নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। যেখানে যেখানে এটির ধরা পড়েছে সেই সব ত্রুটি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ত্রুটিগুলো খুব বড় কোন সমস্যা নয়। তারপরও প্রকল্পটির মনিটরিং বাড়িয়ে দিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে গড়ে ওঠা শহর এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ মাত্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির তীব্র সমস্যাকে বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

প্রকল্পের দুর্বল দিক : আইএমইডির প্রতিবেদনে প্রকল্পটির বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রতি বছরের কাজের অগ্রগতি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও কাজের মান আশাব্যঞ্জক নয়। প্রকল্প বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল না। অধিকাংশ জেলায় কাজের তুলনায় জনবল অনেক কম ছিল। প্রকল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত পাইপলাইনে ব্যবহৃত পাইপের মান খারাপ হওয়ায় কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত মূল্য বর্তমান বাজার দরের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় কোন ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভা থেকে ভূমি হস্তান্তরের অনেক দীর্ঘসূত্রতা ছিল বলে অনেক মত প্রকাশ করেছেন। কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে ঠিকাদারদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগেছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। কাজের মান অধিকাংশ জায়গায় অনেক খারাপ ছিল বলে জনগণ প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের যতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তার রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমত হচ্ছে না। প্রকল্প থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সব রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহের পানি অপ্রতুল ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে । প্রকল্প এলাকায় শতভাগ মানুষ পানি পাচ্ছেন না। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানির লাইন বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী খুবই অসন্তুষ্ট। নিয়মিত স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

প্রকল্পের ঝুঁকি: প্রতিবেদনে দুর্বল দিকের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ঝুঁকির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রকল্প এলাকার সবাই সরবরাহ থেকে পানি পাচ্ছেন না। যারা পানি সরবরাহের আওতায় নেই তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্পের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চাহিদা ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে তা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন, তা না হলে ভবিষ্যতে প্রকল্পটি বড় রকমের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামোগুলো নিয়মিত পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে। প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিচালনার ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত না করার ফলে এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গ নির্মাণে ভাল উপকরণ ব্যবহৃত না হলে তা অল্পসময়ে অকেজো হয়ে পড়বে। পাইপ লাইনের পাইপ উন্নতমানের না হলে পরবর্তীতে লিকেজ হয়ে পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের পাশ দিয়ে পানি সরবরাহের পাইপ নেয়ার পানি দূষণের সম্ভাবনাটাও অনেক বেশি রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সবল দিক এবং সম্ভাবনার বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে প্রকল্পটি বা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা ছিল, যেমন স্থান চিহ্নিত করার জটিলতা। প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়ার কারণে তা বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়েছিল। অধিকাংশ জায়গায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও প্রোডাকশন পাম্প স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পেতে সমস্যা হয়। বিকল্প হিসাবে জমি অধিগ্রহণের কোন ব্যবস্থা এই প্রকল্পের আওতায় ছিল না। পৌরসভায় জমি অধিগ্রহণ, প্রোডাকশন টিউবওয়েল এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের সময় পৌরসভার সঙ্গে ডিপিএইচই এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে বাস্তবায়নের সমস্যা ও জমি অধিগ্রহণ সমস্যার বিষয়ে ডিপিএইচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানা যায়। এছাড়া ঠিকাদারদের অবহেলা এবং বিদ্যুত সংযোগ পেরে বিলম্বসহ নানা কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে শুরু করতেই দেরি হয়।  সূত্র : জনকণ্ঠ