• Saturday, December 21, 2024

রাজশাহীতে গণসংযোগে এগিয়ে এমপিরা

  • Oct 02, 2018

Share With
  • -রাজশাহীতে মাঠে নেই বিএনপি-

আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন মনোনয়ন যুদ্ধে সোচ্চার নেতারা। রাজশাহীর সংসদীয় ৬টি আসনের সবকটিতেই আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা ছাড়াও কিছু তরুণ প্রার্থী মাঠ চষে বেড়ালেও অনেকটায় মাঠশূন্য এখন বিএনপির। হঠাৎ করেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। গত ঈদের আগেও তারা মাঠে সোচ্চার থাকলেও এখন আর তাদের হদিস নেই। তবে রাজশাহীর সবকটি আসনেই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে এবং আবারও মনোনয়ন পেতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমানের সংসদ সদস্যরা। নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন মূলক কর্মকা-ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ছাড়াও মিছিল, মিটিং, গণসংযোগে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এমপিরা। নানা অনুষ্ঠানে তারা আবারও নিজেদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও তারা শতভাগ আশাবাদী। সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এক বছর আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজশাহীর ছয়টি আসনেই ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন নেতারা। এরই মধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সংসদীয় আসনে নৌকার পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে। পাল্টে গেছে ভোটের হিসেবও। সিটি নির্বাচনের পর সংসদীয় আসনের মাঠে সক্রিয় হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে হঠাৎ করেই মাঠ ছেড়ে অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সিটি নির্বাচনে নৌকার পালে হাওয়া লাগায় আবারও রাজশাহীর ৬টি আসনই ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এখন দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিই বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছেন তারা। আর সিটি নির্বাচনে ভরাডুবির পর মাঠে অনেকটায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতারা। এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর ৬ আসনেই এখন নড়বড়ে অবস্থানে বিএনপি। রাজশাহীর সংসদীয় ৬ আসনের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছেন বড় দুই দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এমপিরা বেশিরভাগ সময় এখন কাটাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে মনোনয়নের আশায় নেমেছেন তরুণ নেতারাও। এসব প্রার্থী জানান দিয়ে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এলাকায় দোয়া চেয়ে অনেকেই ঝুলিয়েছেন ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার।

রাজশাহী ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতেই বর্তমানে রয়েছে আওয়ামী লীগের এমপি। আর রাজশাহী সদর আসনের রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি। এই ছয়টি আসনে এবারও পুরনোরা মনোনয়ন আকড়ে ধরার পাশাপাশি নতুনদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে।

জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনটি বিএনপির কব্জা থেকে ২০০৮ সালে উদ্ধার করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এবারো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন এলাকায় থেকে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে জনগণকে ভোটের বার্তা দিচ্ছেন। একই আসনে মনোনয়নের জন্য এবার মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী। তবে এখানে নির্বাচনে প্রচারের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি নিয়মিত দুই উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন ঈঙ্গিত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এগিয়ে রয়েছে। তবে বিরুদ্ধে এক হয়ে মাঠে নেমেছেন দলের সাতজন নেতা। যারা নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দাবি করছেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুলের নাম উচ্চারিত হলেও দীর্ঘদিন মাঠে নেই তিনি। রাজশাহী নগর নিয়ে গঠিত সদর আসনটিও ২০০৮ সালে মহাজোট প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা দখলে নেন। এবারো এ আসনে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হয়ে আছে বাদশার। তিনি যথারীতি মাঠে সক্রিয় থাকলেও এখানে নেই বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু।

পবা ও মোহনপুর উপজেলার তিনটি পৌরসভা এবং ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক ডজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০০৮ সালে রাজশাহী সদর আসন থেকে আলাদা হওয়ার পর দুই মেয়াদ ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে।

এ আসনের বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। মনোনয়ন দৌড়ে এবারো তিনি এগিয়ে রয়েছে। নিজ এলাকায় থাকছেন। নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের উদ্বোধন আর সভা সভাবেশ নিয়ে ব্যস্ত তিনি অনেকটায় জনগণের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন। এ আসনে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন প্রার্থী হতে পারেন এমন ঈঙ্গিত পেলেও মাঠে তেমন সক্রিয় নন তিনি।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন ছাড়াও সাবেক এমটি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন। শুধু বাগমারা নিয়ে রাজশাহী-৪ আসন। এ আসনটিও ২০০৮ সালে সৃষ্টি। সেই থেকেই এ আসনটি দখলে নেন আওয়ামী লীগ। এ আসনের এমপি এনামুল হক ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবার এনামুল হক ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি জঙ্গী অধ্যুষিত এ আসনে সন্ত্রাস ও জঙ্গী নির্মূলে অনেক সোচ্চার রয়েছেন এনামুল। এ কারণে এবারও তিনিই মনোনয়ন পেতে পারেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তিনি। এগিয়ে রয়েছে প্রচারে। এ আসনেও হঠাৎ করেই বিএনপি সম্ভাব্য কাউকে মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না।

পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসনটিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে উদ্ধার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০১৪ সালেও আসনটি ধরে রাখে দলটি। এখানে দারা এবারও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তবে একই আসনে দারা বিরোধী কয়েক নেতাও রয়েছেন মনোনয়ন লাভের আশায়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আরো পাঁচ নেতা। তারা এখন ভোটের মাঠে রয়েছেন। সাম্ভাব্য এসব প্রার্থীরা সুযোগ পেলেই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। করছেন গণসংযোগ, মতবিনিময়। তবে বর্তমান এমপি দারার পাশাপাশি মনোনয়ন নিতে মরিয়া আরো তিনজন। এরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান-উল-হক মাসুদ, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান ও আসিফ ইবনে তিতাস। নৌকার দাবিদার হিসেবে তারা পুঠিয়া-দুর্গাপুরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সাঁটিয়েছেন নিজেদের ব্যানার-ফেস্টুন। এখানে বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা এবারও প্রার্থী হতে পারেন তবে মানে তার হদিস নেই দীর্ঘদিন। পদ্মাপাড়ের বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে প্রধান দুই দলে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আবারও এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে চান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আর বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত এবারও শাহরিয়ার আলমের। তবে মনোনয়ন চাইবেন ও আসনটির সাবেক এমপি রায়হানুল হক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে আসনটি দখলে নেন শাহরিয়ার আলম। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও শাহরিয়ার আলম দলের মনোনয়ন পান। সেবার পুনর্নির্বাচিত হয়ে শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। উন্নয়ন দিয়ে পাল্টে দেন বাঘা-চারঘাটের চেহারা। রাষ্ট্রীয় কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকলেও উন্নয়নে এগিয়ে রাখা এ আসনে তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এ আসনে এবারও আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন শাহরিয়ার আলম।