বাংলাদেশে প্রথম উদ্বোধন হলো পোষা প্রাণীর হাসপাতাল
- Oct 30, 2018
দেশে পোষা প্রাণীর প্রথম হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর পূর্বাচলে। শনিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। ২২ কাঠা জমির ওপর স্থাপিত টিচিং এ্যান্ড ট্রেনিং পেট হসপিটাল এ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠায় আপাতত সহায়তাকারী চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। মূলত এই স্বনামখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগেই স্থাপন সম্ভব হয়েছে পোষা প্রাণীর হাসপাতালটি।
উল্লেখ্য, দেশের ছয়টি ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য কোন গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নেই। ফলে প্রতি বছর কয়েক শ’ স্নাতক বের হয়ে এলেও ইন্টার্ন ও দক্ষতার অভাবে তারা দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারেন না। পক্ষান্তরে চাকরি জীবনে প্রবেশ করে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে কাজ শিখে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ততদিনে বয়স পেরিয়ে যায়।
ফলে ইচ্ছা থাকলেও নিজের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। রাজধানীর পেট হসপিটাল এ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি তাদের জন্য ইন্টার্নশিপসহ হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণের অবারিত সুযোগ করে দেবে। এর ফলে তারা দেশে পোষা পশু-প্রাণীর জন্য প্রাইভেট চেম্বারে প্র্যাকটিস করার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির জন্য যেতে পারবেন। উল্লেখ্য, বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-অস্ট্রেলিয়াসহ অনত্র পোষা প্রাণীর চিকিৎসক ও শল্যবিদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম হবে। এও সত্য যে, দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যত্র পশু-পাখির চিড়িয়াখানাগুলোতে ভাল ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক দূরের কথা, প্রাথমিক স্তরের সার্জন ও পশু চিকিৎসক নেই। পেট হাসপাতাল থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক বের হয়ে এলে এই সমস্যা সঙ্কটের অনেকটা সমাধান হবে। বরং বলা যায়, পশু-পাখি-পোষা প্রাণীর দুর্ভাগ্যের অবসান হবে, অন্তত বিনা চিকিৎসায় হতভাগা প্রাণীদের আর মরতে হবে না।
পূর্বাচলের পেট হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে অভিজ্ঞ গ্র্যাজুয়েট তৈরির পাশাপাশি যে বা যারা পোষা প্রাণী ও পাখ-পাখালি লালন-পালন করে থাকেন তাদের কথা ভেবেই। সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজধানীতে কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ পোষা প্রাণী রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। ঢাকার বাইরেও নিশ্চয়ই রয়েছে বিবিধ ধরনের পোষা প্রাণী। বাংলাদেশ থেকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের পোষা পশু-পাখি এমনকি বাঘ-কুমিরের ছানা, গিরগিটি, কচ্ছপ ইত্যাদি পাচারের অভিযোগ আছে।
এ সবই প্রধানত লালন-পালনের উদ্দেশ্য করা হয়। সম্প্রতি একই সঙ্গে চল্লিশটি জেব্রা ধরা পড়ার খবরও আছে। পাচারের পথে এসব প্রাণী নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রায়ই খাপ খাওয়াতে পারে না। পোষা প্রাণীর হাসপাতাল তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। এই হাসপাতালে কুকুর, বেড়াল, পাখি দেখানোর ফিসও খুব বেশি নয়। তদুপরি কোন রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্য রয়েছে সর্বাধুনিক প্যাথ ল্যাব, সিটি স্ক্যান ইত্যাদির সুযোগ-সুবিধা, এমনকি আইসিইউ।
কূটনীতিকদের পোষা প্রাণী ও পাখির জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধাসহ ভাড়ায় পশু-পাখি রাখার সুযোগ। আমরা এ রকম একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করি। পোষা প্রাণী ও পাখির জন্য একটি হাসপাতালের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকে।