• Tuesday, December 3, 2024

ক্লান্ত চোখে চাই ঘুম, তবুও নির্ঘুম পুলিশের রাত

  • Oct 29, 2018

Share With

সারারাত এলাকার পুলিশের ডিউটি তদারকি করে ভোররাতে বাড়ি ফিরে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওসি সাহেব। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর, বিছানায় যাওয়া মাত্র ঘুমের দেশে চলে যাবেন ভেবে গা এলিয়ে দিয়েছেন বিছানায়। মোবাইল ফোনটি বন্ধ করার জন্য হাতে নিতেই বেজে ওঠে ফোনটি। অপরিচিত এক নম্বর থেকে কল। ক্লান্ত চোখেই ফোন রিসিভ করে শুনতে পান সাবরাংয়ের কাটাবনিয়া ঝাঁউ বাগানে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে বন্দুকযুদ্ধ। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্কিত মানুষ। দ্রুত পুলিশ না গেলে অনেক জীবনের হতে পারে অবসান।

হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে জরুরী ডিউটিতে নিয়োজিত থাকা পুলিশ সদস্যদের রেডি হয়ে গাড়িতে উঠতে বললেন তিনি। নিজে পোশাক পরে বের হয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললেন দ্রুত যেতে ঘটনাস্থলে। এলাকার টহল ডিউটিতে থাকা পুলিশ টিমকেও ওয়াকিটকিতে বললেন অপারেশনে যুক্ত হতে। ততোক্ষণে গড়িয়েছে সময়, রাতের আঁধার ভেদ করে আলো প্রবেশ করতে শুরু করেছে সমূদ্র উপকুলে। দুরের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আযানের ধ্বনি। গুলির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে নিকটবর্তী ঝাঁউ বাগানে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়ছে পুলিশের দিকে। পুলিশকেও পাল্টা গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দিলেন ওসি সাহেব। ছোঁড়া হলো একশত পাঁচ রাউন্ড গুলি। এরপর থেমে গেলো সন্ত্রাসীদের গুলির আওয়াজ। তবে, পুলিশের এসআই রাজু, এএসআই মিঠু ও কনস্টেবল ইব্রাহীম খলিল সন্ত্রাসীদের গুলিতে হয়েছেন আহত। সন্ত্রাসীরা আছে না পিছু হটেছে বোঝা যাচ্ছেনা আধো আলো আধো আঁধারে। তারপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওসি সাহেব ফোর্স সহ এগিয়ে গেলেন ঝাঁউ বনের মাঝে। ততোক্ষণে আঁধার গিয়েছে কেটে, সূর্যের আলো উঠেছে হেসে। বনের মধ্যে থেকে উদ্ধার করলেন ২টি রক্তাক্ত মৃতদেহ, ৬টি অস্ত্র, ২৫ রাউন্ড গুলি ও দশ হাজার পিস ইয়াবা।

ঘটনা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানায় ২৮ অক্টোবর ভোরে। নিহতরা টেকনাফ পৌর এলাকার উত্তর জালিয়া পাড়ার মোহাম্মদ হাশিমের ছেলে হাসান আলী (৪৩) ও একই উপজেলার নাজির পাড়ার নুরুল আলমের পুত্র মোঃ কামাল উদ্দিন (২৮)। ঘুম নেই পুলিশের চোখে, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে পাঠাতে হবে মর্গে। আলামত জব্দ করতে সময় লাগবে বেশ। আহত পুলিশদের পাঠাতে হবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে। তারপর থানায় গিয়ে করতে হবে মামলা দায়ের। সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপেক্ষায় আছে অভিযানের সর্বশেষ ফলাফল জানতে। তাদেরকে জানাতে হবে অভিযানের আদিঅন্ত। অস্ত্র, মাদক, হত্যা ও পুলিশের উপর আক্রমন বিষয়ে একটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে ১১ জন এজাহার নামীয়সহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। এ ধরণের অভিযান নিয়মিত করতে হয় পুলিশকে। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশের মতো অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘুমাতে গিয়েও ঘুমোতে পারেন না কর্তব্যের টানে। আর রচনা করেন এমন সব রোমহর্ষক গল্পের।