আজ থেকে সংলাপ
- Oct 31, 2018
- ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিদেশী কূটনীতিকরা
- সব দলের সঙ্গে বসতে চায় আওয়ামী লীগ
উত্তম চক্রবর্তী ও রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে বহুল আলোচিত সংলাপ। সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব মেনে নিয়েই আজ সন্ধ্যা সাতটায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গঠিত নতুন রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবনে সংলাপে বসবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সংলাপের দ্বার খুলল। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সরকারী দল ও বিরোধীদের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে এ সংলাপের উদ্যোগ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুরো দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে আজ গণভবনের দিকে। সংলাপে কী হবে? সফল হবে নাকি অতীতের মতো ব্যর্থ হবে? এমন আশা-আশঙ্কা নিয়েই রাজনৈতিক সচেতন দেশের মানুষের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, সংলাপের ফলে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ তৈরি হবে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও বলছেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত। সংবিধানসম্মত বিষয়ে যে কোন দল সংলাপ চাইলে সাড়া দেবে আওয়ামী লীগ। বহুল প্রতীক্ষিত আজকের সংলাপে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিকল্প ধারার সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সংলাপে বসার কথা রয়েছে। বুধবার দুপুরে সংলাপ চেয়ে আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্রটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ নবেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গণভবনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানান। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ‘বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা’ কামরুল হাসান নাসিম। তিনটার দিকে নাসিমের পক্ষ হতে উদ্যোগের ‘সঙ্কটকালীন দুই সদস্য’ জহির উদ্দীন ও কবি মেহরাব পিয়াস এই চিঠি তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত চারটি দল সংলাপ চেয়ে আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি দেয়। আরও কয়েকটি দল আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সংলাপ চেয়ে চিঠি দিতে পারে।
সংশয় বা আশঙ্কা যাই থাকুক না কেন, সংলাপকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। এই উদ্যোগে রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। আর এবারের সংলাপের আয়োজনের বৈশিষ্ট্যও আলাদা। কোনরূপ আন্দোলন কিংবা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ না থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার ইতিবাচক সাড়া দেয়ার ঘটনাও অতীতে কখনও ঘটেনি। একটা জোটের সংলাপের আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের রাজি হওয়ার ঘটনাও সবাইকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। আজ আনুষ্ঠানিক সংলাপের মধ্যে দিয়েই সবার অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের একটি পথ বেরুবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
আওয়ামী লীগের ২২ ও ঐক্যফ্রন্টের ১৬ প্রতিনিধি ॥ আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দেবে। এর মধ্যে ১৪ দলের শরিক নেতারাও রয়েছেন। এছাড়া ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা সংলাপে অংশ নেবেন। বুধবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক সংলাপে অংশ নেবেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপুমনি, আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শম রেজাউল করিমও উপস্থিত থাকবেন। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল সংলাপে অংশ নেবেন।
এদিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রব জানান, ড. কামাল ছাড়া ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেবে। গণভবনের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে দলনেতা হিসেবে থাকবেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস।
নাগরিক ঐক্য থেকে থাকবেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও এসএম আকরাম। গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী। জেএসডি থেকে আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল মালেক রতন, তানিয়া রব। ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সুলতান মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন ও স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবেন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তনের কথা বলে আসছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এবার তার এই স্বপ্ন পূরণের পালা। যদিও তিনি বলেছেন, মন্ত্রী- এমপি হওয়ার ইচ্ছা নেই। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থেই তিনি জোট গঠন করেছেন। প্রথমে কথা ছিল বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে যোগ দেবেন তিনি। কিন্তু যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে তিনি গঠন করলেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। এক পর্যায়ে বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়ে ১৩ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে গঠন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও জামায়াত ছাড়তে তিনি বারবার বিএনপিকে শর্ত দিয়েছিলেন। একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে বলেছিলেন, জামায়াত না ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে কোন ঐক্য নয়। অথচ শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে ২০দলে রেখেই বিএনপির সঙ্গে কামাল হোসেনের ঐক্য হয়।
ঐক্য গড়ার পর থেকেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অভিন্ন সুরে সরকারের কাছে সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই সংলাপের প্রস্তাব নাকোচ করা হয়েছিল। হঠাৎ করেই রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করে। রবিবার ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপ চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দেয়া হয়। সোমবার বিকেলে ফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায়। সন্ধ্যায় বৈঠক করে সংলাপে অংশগ্রহণকারী ১৬ নেতার নাম ঠিক করেন ফ্রন্ট নেতারা। এর মধ্য দিয়ে দ্রুত দৃশ্যপটের পরিবর্তন হতে থাকে। সংলাপমুখী এখন দেশের রাজনীতির বাতাস। অনেকের মতে রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এরমধ্য দিয়ে দেশবাসীকে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে হবে না। কূটনীতিকরাও আশাবাদী সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।
হঠাৎ করে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির চমক। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করা যায়। তাই দলীয় সভানেত্রী সংলাপের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দ্বার সবার জন্য খোলা। যে কেউ সংলাপের জন্য আসতে পারে। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নেয়া প্রশ্নে কাদের বলেন, বিষয়গুলো দল ও সরকারের। তাদের দাবি মেনে নেয়ার বিষয় তো আমরা বলতে পারি না যে মেনে নেয়া হলো। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আরেকটি বিষয় আছে, সেটা হলো বিদেশী পর্যবেক্ষক। সেটা তো মেনে নেয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যেটা আমরা মেনে নিতে পারি না সেটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তবে প্রধানমন্ত্রী যখন চেয়েছেন তখন আলাপ-আলোচনা খোলামেলা পরিবেশেই হবে।
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনাটা সরকারের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে, বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ সংলাপ সরকারের সঙ্গে নয়, এ সংলাপ আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
নতুন এই জোটের নেতা ও সংবিধান প্রণেতা কামাল এরই মধ্যে বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়াই তার লক্ষ্য। বিএনপির সঙ্গে জোট করলেও জামায়াতে ইসলামী ও তারেক রহমানের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কোন সম্পর্ক নেই।
সংলাপ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। যে যে আসতে চায় আসবে। আশা করি আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সঙ্কটের সমাধান হবে। এরমধ্য দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান আমরা উপহার দিতে পারব।
সংলাপের জন্য বাম নেতারাও বারবার কথা বলছিলেন। সরকারের নানামুখী সমালোচনায় বাম নেতারা সব সময় তৎপর থাকলেও সংলাপের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা সংলাপের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ধীর্ঘদিন পরে হলেও সরকার অনুভব করতে পেরেছে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করতে হলে সংলাপ করা প্রয়োজন। এটি সরকারের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে প্রবীণ এই বাম নেতা বলেন, সংলাপ যেন দু’পক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য না হয়। আমরা চাই অর্থবহ সংলাপ। যার মধ্য দিয়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে। এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। আশা করি সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করবে।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপের ফল ইতিবাচক হবে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি কোন্ পথে যাবে তা জনগণের ওপর নির্ভর করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি সরকারের কাছে তোলার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের বিষয়ে আন্তরিক এবং সব দলের সঙ্গে সংলাপ করতে চান বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংলাপের বিষয়ে আন্তরিক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট ছাড়াও অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। যেসব দল প্রস্তাব দেবে প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গেই সংলাপে বসতে আগ্রহী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে যে শুধু কি ঐক্যফ্রন্ট বা যুক্তফ্রন্টের সঙ্গেই সংলাপ? সে ব্যাপারেও আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা দরকার যে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- তিনি অন্যান্য দলের সঙ্গেও সংলাপে বসতে রাজি। আমরা দেখি, কারা কারা সংলাপের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সময় হয় কিনা এটাও ম্যাটার। সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয় আছে, তার আগে যতটা সম্ভব দলের সঙ্গে সংলাপ করার ইচ্ছা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেই কভার হয়ে যাবে।
বিএনপি বা ২০ দল যদি প্রস্তাব পাঠায় তাহলে কী হবে- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, না, না, এখন তো সময় নেই। যদি নির্বাচন কমিশন ৩, ৪ বা ৫ তারিখ নির্বাচানের তফসিল ঘোষণা করে। তাহলে কী করে আর বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা হবে? প্রধানমন্ত্রীর জন্য এখন সময় বের করাটা কঠিন কাজ। আগামী ২ নবেম্বর ময়মনসিংহ থেকে ফিরে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বসবেন তিনি। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে বিকল্প ধারার সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ॥ আটটি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটকেও সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার রাত আটটার দিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হককে ফোন করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই আহŸান জানানো হয়। একই সঙ্গে জোট থেকে কারা সংলাপে অংশ নিতে পারেন, সেই তালিকাও চেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এই খবর নিশ্চিত করে বুধবার রাতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, বুধবার রাত আটটার দিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা তাকে ফোন করেন। ওই সময়ই সংলাপে বসার আহŸান জানানো হয়। এ ছাড়া জোট থেকে কারা সংলাপে অংশ নিতে পারেন, তার একটি তালিকা পাঠানোরও অনুরোধ করেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সংলাপের আহŸান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংলাপে অংশ নেয়া হবে কি না তা আজ বৃহস্পতিবার জোটের সব দলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগকে জানানো হবে।