চাঁপাইনবাবগঞ্জে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক যোদ্ধার নাম আব্দুস সালাম
- Nov 04, 2018
ডি এম কপোত নবী : জীবন যুদ্ধে অবিরাম ছুুটে চলা এক মানুষের নাম মো. আব্দুস সালাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর পাশেই সালামের বাড়ি। তাঁর একটি পা নেই। আরেকটি পা প্রায় অচল। তবু জীবন যুদ্ধে এতটুকু থেমে নেই তাঁর জীবন যুদ্ধ। দু ভাই ও দু বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সালাম অন্য আর দশজনের মতো সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন। চলাফেরা, খেলা-ধুলা সবই করতে পারতেন।
কিন্তু নিয়তির লিখন, এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁকে পঙ্গত্ব বরণ করতে হয়েছে। সালাম বলেন, আমি আর সবার মতো একজন সুস্থ মানুষ ছিলাম। এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর ট্রাক চালানো শুরু করি। দিনকাল ভালই কাটছিল। ২০০৪ সালে ট্রাকে করে মালামাল নিয়ে ঢাকা থেকে আসার পথে পাবনায় অপরপাশ থেকে আসা অপর একটি যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হই।
আমি সে সময় ট্রাকের চালক ছিলাম। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। সালাম জানান, আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতাল গেলে চিকিৎসক একটি পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক পা কাটা পড়ে। অন্য পাটিও খুব একটা কাজ করে না।
পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় লাখখানেক টাকা ব্যয় করে দীর্ঘ একটি বছর পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি। সবই ঠিক আছে কিন্তু হারিয়েছি একটি পা। বর্তমানে আমি প্রতিবন্ধী। সাহায্য সগযোগিতা বলতে সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধী ভাতাটা পাই। এ ছাড়া কারো কাছে সহায়তার হাত কিংবা ভিক্ষার ঝুলি না নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করি।
শহরের শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ মহানন্দা সেতুর টোল ঘর সংলগ্নস্থানে চাষী বাজারে ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে শুরু হয় নতুন জীবন। যা আজ পর্যন্ত চলছে। ফল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা রকম পণ্য পাওয়া যায় তার দোকানে। চা, কফি খাবারেরও ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। দোকান ভালো মতই চলছে। স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে সালামের ছোট্র পরিবার।
সন্তানরা লেখাপড়া করছে। সালামের ইচ্ছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। দোকান থেকেই তার পরিবারসহ যাবতীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে। শেষ বেলায় হাসি মুখে তাই সালাম জানালেন, এতকিছুর পরেও আমি কারো কাছে হাত পাতিনি। যতদিন বেঁচে থাকব কর্ম করেই বেঁচে থাকতে চাই। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে জীবন যুদ্ধে লড়ে আজ বিজয়ী তিনি। আর তাই বলা যায়-হার না মানা এক যোদ্ধার নাম মো. আব্দুস সালাম।