• Thursday, November 21, 2024

আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের যথোপযুক্ত জবাব দেব : প্রধানমন্ত্রী

  • Oct 14, 2018

Share With

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু মেগাপ্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে যথোপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ এবং উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছেন তাদেরকে যথোপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ সেতুর জন্য স্থানীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে অপমান আমাদের সহ্য করতে হয়েছে তা দেশের মানুষের জানা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কোন দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি আস্থা নেই তারাই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
শেখ হাসিনা আজ এখানে পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ার ফলক উন্মোচনের পর মাওয়া টোলপ্লাজার কাছে গোলচত্বরে এক সুধী সমাবেশে ভাষণদানকালে এ কথা বলেন।
তিনি পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং মাওয়া-কান্দিপাড়া-যশোলদিয়া এলাকায় ১ হাজার ৩শ’ মিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক বাধা পাড়ি দিতে হয়েছে এবং অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি আমার পরিবারের সদস্যদেরও সুনাম বিনষ্টের চেষ্টা হয়েছে। শেষে কানাডার একটি ফেডারেল কোর্টে সব অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের গড়িমসিতে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন ২ বছর পিছিয়ে গেছে। আমাদের কিছু মানুষসহ অনেকের মাঝে এ ধারণা হয়েছিল যে, বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এই সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। সে সময় কেবলমাত্র মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং তিনি এ প্রকল্পের প্রোফাইল তৈরির জন্য তার একজন উপদেষ্টাও পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু আমার পিতার মতো আমারও বাংলাদেশের জনগণের শক্তির উপর অগাধ আস্থা রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তারাই আমার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। জনগণের অনুপ্রেরণায় ও তাদের শক্তির ওপর আস্থাশীল হয়ে আমরা এই মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে তাঁর সিদ্ধান্তে জনগণের সমর্থন ও সাহস জোগানের জন্য দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, রাজনীতি থেকে আমার পাওয়ার কিছু নেই, আমি রাজনীতি করি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুকে “গর্বের সেতু” হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, সেতুটি সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর উপর ডেক দিয়ে মোটরযান ও নিচের ডেক দিয়ে রেল চলাচল করবে।
সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণ অঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে সরাসরি রাজধানী ঢাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই জেলাসমুহের জনগণের জীবন-যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাক্কলিত ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ের এই পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জন করবে এবং ০. ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। এর সামগ্রিক কাজ ৬০ শতাংশ এবং মূল সেতুর ভৌতিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ৫ম স্প্যান লাগানোর পর মোট ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মূল স্থাপনার ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
প্রমত্ত পদ্মা নদীর ব্যবস্থাপনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে স্থায়ী নদী সুরক্ষার ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড যথাযথ মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে “পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রকল্প” শেষ করবে।
তিনি বলেন, দেশের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকে মোটরযানের সাথে সাথে ট্রেনও চলাচল করবে।”
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প ২০১৬’র ৩ মে একনেকে পাস হয়েছে।
অত্যাধুনিক ট্রাফিক নকশা অনুযায়ী ৫৫ কিলোমিটার ঢাকা (যাত্রবাড়ি)-মাওয়া এবং পাছচর-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এতে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের উভয় দিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য ৫ দশমিক ৫ মিটার চওড়া লেন এবং মহাসড়কের মাঝ বরাবর ৫ মিটার চওড়া সড়ক বিভাজক থাকবে।
এই বিভাজক স্থানে মেট্রো রেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যবস্থা করার সুযোগ থাকবে।